সেনা চৌকিতে হামলা : থাইল্যান্ডে পালাল মিয়ানমারের ৬২ সেনা

মিয়ানমার-থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছাকাছি একটি সেনাচৌকিতে বিদ্রোহীদের হামলার পর সীমান্ত পেরিয়ে থাইল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমারের ৬২ জন সেনা। শনিবার দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় কারেন রাজ্যে ঘটেছে এ ঘটনা।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, শনিবার কারেন রাজ্যে মিয়ানিমার-থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে একটি সেনা চৌকিতে হামলা চালায় জান্তাবিরোধী ও কারেনভিত্তিক সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (কেএনএলএ)।

থাইল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া সেনাদের বরাত দিয়ে দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, শনিবার সকালের দিকে সেই সেনা চৌকিতে অতর্কিত হামলা চালায় কেএনএলএ যোদ্ধারা। কয়েক ঘণ্টা তাদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ হয় এবং এ সময়সীমায় ১৮ জন সেনা নিহত হয় এবং আহত হয় আরও ১১ জন সেনা। আহত সেনাদের সঙ্গে নিয়ে বাকি সেনারা সেনা চৌকি থেকে পলায়ন করে সীমান্ত পেরিয়ে থাইল্যান্ডে আশ্রয় নেয়।

থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করা হয়েছে। থাই সেনা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগত এই সেনাদের বর্তমানে সীমান্তবর্তী তাক প্রদেশের ফপ ফারা জেলায় রাখা হয়েছে এবং আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

২০২০ সালের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন এনএলডি সরকারকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং এই অভুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, ক্ষমতা দখলের পর গঠিত সামরিক সরকারের প্রধানও হন তিনি।

অভ্যুত্থানের সময়েই বন্দি করা হয়েছিল অং সান সুচি, তার নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রী-এমপি এবং তার রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি’র (এনএলডি) হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে। সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি জনগণ প্রথম দিকে ব্যাপক আকারে বিক্ষোভ-আন্দোলন শুরু করেছিলেন, কিন্তু প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে সেসব বিক্ষোভ দমন করেছে সামরিক সরকার।

তবে তার পর থেকে গণতন্ত্রপন্থি জনগণের একটি অংশ যোগ দিতে শুরু করেন সামরিক বাহিনী বিরোধী বিভিন্ন সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠীতে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে বেশ কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী একযোগে হামলা শুরু করে সামরিক বাহিনীর ওপর। এখনও সেই সংঘাত চলছে এবং ইতোমধ্যে দেশটির মোট ভূখণ্ডের বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলেছে বিদ্রোহীরা।

মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে কেএনএলএ সবচেয়ে পুরোনো গোষ্ঠী। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই গোষ্ঠীটি মিয়ানমারের সবচেয়ে প্রভাবশালী জান্তাবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যেও একটি।

সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি