চট্টগ্রামের-১৫ (আংশিক সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায়) আসনের সংসদীয় এলাকায় ছড়িয়ে পড়া একটি পোস্টার নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী। দুজনেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যক্তিগত আইডি থেকে পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। দুজনের স্ট্যাটাস নিয়ে এখন চট্টগ্রামে চলছে আলোচনা সমালোচনা।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নে আবু রেজা নদভী চট্টগ্রাম-১৫ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। একই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ নেতা এম এ মোতালেব সিআইপি। নদভী ও তার সমর্থকরা বারবার অভিযোগ করে আসছিলেন বিপ্লব বড়ুয়ার সমর্থন নিয়ে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন মোতালেব। যদিও বিপ্লব বড়ুয়া অভিযোগটি সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন।
এদিকে, সম্প্রতি বিপ্লব বড়ুয়া সমর্থিত প্রার্থী এম এ মোতালেব লেখা সম্বলিত একটি পোস্টার সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় প্রচার করা হয়। নদভীর সমর্থকরাই এ কাজ করেছেন বলে অভিযোগ করে বিপ্লব বড়ুয়া। এ নিয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম রিটার্নিং কার্যালয়ে বিপ্লব বড়ুয়ার পক্ষে অভিযোগ জমা দেন জিকো বড়ুয়া নামে এক আইনজীবী। এতে উল্লেখ করা হয়, বিপ্লব বড়ুয়ার মানহানি এবং এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে আবু রেজা নদভী ও তার সমর্থকরাই এ কাজ করছেন।
এই পোস্টার নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। ছবি- সংগৃহীত
বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি লেখেন, এতো মিথ্যাচার-ষড়যন্ত্র করে কী লাভ? বানোয়াট-ভিত্তিহীন কোনো কিছুর কী স্থায়িত্ব থাকে? আমার ছবি দিয়ে নিজেরাই পোস্টার ছাপিয়ে অপপ্রচার করতে পারবেন- ষড়যন্ত্র করতে পারবেন! কিন্তু কখনো সফল হতে পারবেন না। অতীত তাই বলে। ভবিষ্যতেও সত্য উদ্ভাসিত হবে। সত্য ও সততার নিজস্ব একটি শক্তি থাকে, তা অপরাজেয়! সত্য সব সময় আত্মশক্তিতে বলিয়ান। মিথ্যা দিয়ে তাকে দমিয়ে রাখা যায় না।
আমি ঢাকা-৮ আসনের একজন ভোটার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকাতেই ভোট দিয়েছি। মন্ত্রী-এমপি কিংবা বড় পদ-পদবী পাওয়ার প্রতিযোগিতায় নামিনি। ভবিষ্যতেও নামবো না। রাজনীতি করে যা পেয়েছি, তা নিয়ে আমার পরম সন্তুষ্টি আছে। সেজন্য আমি পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নিকট কৃতজ্ঞ এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। আমি ধ্যনবাদ জানাই, আমার জন্মস্থান সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সর্বস্তরের জনগণকে তাদের অকৃত্রিম ভালোবাসার জন্য। এ এলাকার জনগণের তাদের পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর অসীম সাহসী কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সে অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বিপ্লব বড়ুয়া লেখেন, বাংলাদেশের জনগণ আগামী ৭ জানুয়ারি তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। আমার মাতৃভূমি সাতকানিয়া-লোহাগাড়া থেকেই কৈশোরে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুমহান আদর্শের রাজনীতির দীক্ষা পেয়েছি। আমার সময়ের অগ্রজ-অনুজ সহযোদ্ধারা এখন এই জনপদের আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী ও জনপ্রতিনিধি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের নেতাকর্মীদের যেকোনো দুঃসময়ে আমি তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করছি।’
আমি নির্বাচন কমিশন ও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে লিখিতভাবে অনুরোধ জানিয়েছি, আমার ছবি ব্যবহার করে কে বা কারা পোস্টার ছাপিয়েছে তা খুঁজে বের করতে। আমি কোনো দিন কোনোপ্রকার কপটতা বা প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করিনি। যারা আমাকে চেনেন, তারা বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারেন। আমার বিশ্বাস এই নির্বাচনে সকল ষড়যন্ত্রকারী মিথ্যাবাদী-প্রতারক অত্যাচারীদের জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে।
এর বিপরীতে শুক্রবার দুপুরে পাল্টা স্ট্যাটাস দেন আবু রেজা নদভী। এতে বিতর্কিত পোস্টার ও বিপ্লব বড়ুয়া স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট সংযুক্ত করে নদভী লেখেন, দলীয় পদ-পদবী ব্যবহার করে মুখে নীতি ও আদর্শের কথা বলে যারা দলের নেতা কর্মীদের বিভক্তি করে প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তাদের স্ববিরোধী বক্তব্যে ও মিথ্যাচারে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার জনগণের আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই। কোনো ব্যবসায়ীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের প্রতি লোলুপ দৃষ্টি দিয়ে এমপি বানানোর নির্লজ্জ কন্ট্রাক্ট নীতি আদর্শের বুলি আওড়ানো একজন পথভ্রষ্ট নেতাকে কত নিচে নিয়ে যেতে পারে তা সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার জনগণ ভালো ভাবেই উপলব্ধি করছে। আপনার মত একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির দায়িত্বজ্ঞানহীন কাণ্ডে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। আপনি আপনার পোস্টে একদিকে দল ও নেত্রীর প্রশংসা করেছেন অন্যদিকে দল ও নেত্রীর আত্মপরিচয়ের প্রতীক নৌকা ডুবানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এই দ্বিমুখী ভূমিকা আবার প্রমাণ করেছে আপনার নীতি ও আদর্শের অবস্থান কোন জায়গায়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন যাবত চট্টগ্রাম-১৫ আওয়ামী পরিবারকে বিভাজন করে আপনার হীনতৎপরতার চূড়ান্ত রূপ কারো কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল না।
তফসিল ঘোষণার পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে আপনার বেপরোয়া তৎপরতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ কারো অজানা নয়। আমার মনোনয়ন ঠেকাতে না পেরে আপনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
এখন শেখ হাসিনার নৌকাকে ডুবাতে আমার ও আমিনুল ইসলাম আমিন ভাইয়ের ১০ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে তৈরি সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে রাতদিন ষড়যন্ত্র করছেন।
এম এ মোতালেবকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করার জন্য আপনার প্রত্যক্ষ মদদের কথা মোতালেবের প্রচার কর্মীরা প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছেন। আপনার প্রত্যক্ষ মদদে আপনার পোষা ক্যাডাররা নৌকার প্রচারণারত আমার স্ত্রীর ওপর জানে মেরে ফেলার জন্য হামলা করেছে। তাকে বাঁচাতে গিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মান্নান ও চরতী ইউনিয়নের নৌকার চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরীসহ ২৫ জন নৌকার কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন।
নদভী লেখেন, আপনার ক্যাডারদের মাঠে নামিয়ে দিয়েছেন নৌকার কর্মীদের হুমকি ধামকি ও জানে মেরে ফেলার ভয় দেখাতে। আপনার এপিএস আরিফ চেয়ারম্যানদের ও নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি এবং অর্থের লোভ দেখিয়ে নৌকার বিরুদ্ধে করতে বাধ্য করছে, যার প্রমাণ আমাদের আছে। নৌকার বিরুদ্ধে আপনার অবস্থানের চূড়ান্ত রূপে বিগত কয়েকদিন যাবত সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় আপনার ছবি সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করে ঈগল মার্কায় ভোট চাওয়া নিঃসন্দেহে আপনার দলীয় পদবী ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীর রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদের অপব্যবহার ও ক্ষমতার নির্লজ্জ দাপট ছাড়া আর কিছু নয়।
নির্বাচন আচরণ বিধির তোয়াক্কা না করে আপনি যে ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন তার প্রতিকার চেয়ে নির্বাচন কমিশন বরাবর আমাদের অভিযোগ পরবর্তী আপনার কাছ থেকে যে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করেছিলাম সেক্ষেত্রেও আপনি হতাশ করেছেন। দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে নিজেকে নির্দোষ দাবী করা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার নামান্তর।
শুধুমাত্র আপনার আসকারা পেয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রীর পদ পাওয়া সাজেদা সুরতের বক্তব্যই প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে মোতালেবের পক্ষে নৌকার বিপক্ষে আপনার অবস্থানের সত্যতা প্রমাণ করে। আপনার ভাই চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিজয় কুমার বড়ুয়ার নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান কি প্রমাণ করে? সাতকানিয়া লোহাগাড়ার আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের কাছে আপনার সরাসরি মুঠোফোন ও বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বাধ্য করেছেন, এ জাতীয় প্রমাণ আমাদের কাছে সংরক্ষিত আছে।
আপনি নির্জলা ভাষায় ষড়যন্ত্রকারী, মিথ্যাবাদী-প্রতারক অত্যাচারীদের পতন চেয়েছেন। কিন্তু কে ষড়যন্ত্রকারী, মিথ্যাবাদী আর প্রতারক সেটির বিচার করার দায়িত্ব সাতকানিয়া লোহাগাড়ার জনগণকেই দিলাম। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হয়েও তার মিশন ও ভিশন পরিপন্থী কাজ এবং বিশ্বাস ভঙ্গের দায়ভার আপনি এড়াতে পারেন না। জনগণই একদিন এই নির্লজ্জতার বিচার করবে ইনশাআল্লাহ।
এমআর/এমএসএ