দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নব নির্বাচিতরা আজ (বুধবার) সকালে শপথ নিয়েছেন। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় শপথ গ্রহণ করবেন মন্ত্রীগণ। নানা অঙ্গনের মতো ক্রীড়াঙ্গনেও আলোচনা চলছে— মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন কে তা নিয়ে।
অনেক মন্ত্রণালয়ে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী থাকলেও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকেন প্রতিমন্ত্রী। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ইতিহাসে একবারই উপমন্ত্রী দেওয়া হয়েছিল। জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আরিফ খান জয় একমাত্র ক্রীড়াবিদ থেকে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সেই পদে আসীন হয়েছিলেন।
বর্তমানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন জাহিদ আহসান রাসেল এমপি। টানা চার বার গাজীপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া রাসেলের পুনরায় স্বপদে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার ক্রীড়াঙ্গনে জোর গুঞ্জন, সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক ও নড়াইলের এমপি মাশরাফি বিন মর্তুজাও ক্রীড়াঙ্গনের সর্বোচ্চ পদে আসীন হতে পারেন। গত সংসদে মাশরাফি প্রথম এমপি এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যও ছিলেন। দ্বিতীয়বার এমপি নির্বাচিত হয়েই যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বের পরিবর্তে তিনি উপমন্ত্রীও হতে পারেন বলে ধারণা অনেকের।
মাশরাফির মন্ত্রীত্ব যেমন আলোচনায়, তেমনি গুঞ্জন চলছে তার খেলা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়েও। মাশরাফি এখন জাতীয় দলে না খেললেও বিপিএল ও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেট খেলেন। আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হতে যাওয়া বিপিএলে তিনি চুক্তিবদ্ধ। মন্ত্রী হলে খেলা চালিয়ে যেতে পারবেন কি না, এ নিয়েও চলছে আলোচনা। মাশরাফি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক। দলীয় পদের পাশাপাশি মন্ত্রীত্বও পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে কৌতুহল প্রচুর।
গত পাঁচ বছরে জাহিদ আহসান রাসেল ক্রীড়াঙ্গনে বেশ সুনামের সঙ্গেই কাজ করেছেন। বিশেষ করে অসুস্থ ক্রীড়াবিদ-সংগঠকদের পাশে দাড়িয়েছেন সব সময়। ক্রীড়াঙ্গনের যে কেউ সব সময় ক্রীড়া মন্ত্রীর কাছে পৌঁছাতে পেরেছেন। ক্রীড়াঙ্গনের অনেকেরই চাওয়া পুনরায় রাসেলকে। তবে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ইতিহাসে টানা দুই বার কেউ মন্ত্রীত্ব পাননি। প্রতিবারই ক্রীড়া মন্ত্রীর পদে পরিবর্তন এসেছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৯১ সালে জাতীয় নির্বাচনে দুই ফুটবল কিংবদন্তি আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু ও বাদল রায়কে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছিল। প্রায় প্রতি নির্বাচনেই ক্রীড়াঙ্গনের তারকাদের মনোনয়ন দিয়ে চমক দেয় দলটি। সাবেক ক্রীড়াবিদ ও সংগঠকদের অনেকেই আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। এখন পর্যন্ত একমাত্র আরিফ খান জয়ই ক্রীড়াবিদ থেকে উপমন্ত্রী হয়েছিলেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ছিলেন বর্তমানে দলের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা ওবায়দুল কাদের। ২০০৯ সালে নাটোরের এমপি আহাদ আলী সরকারকে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিল। পাঁচ বছর পর মাগুরার এমপি বিরেণ শিকদারকে প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আরিফ খান জয় উপমন্ত্রী হন। জাহিদ আহসান রাসেলকে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় ২০১৯ সালে। ওই মেয়াদে কোনো উপমন্ত্রী ছিল না।
২০০৯ ও ১৪ সালে মন্ত্রীত্ব পাওয়া আহাদ আলী সরকার ও বিরেণ শিকদারের ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল না। ২০১৯ সালে মন্ত্রীত্ব পাওয়া জাহিদ আহসান রাসেল সরাসরি ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলেও ২০০৯-১৮ পর্যন্ত দশ বছর ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান থাকায় ক্রীড়াঙ্গনের অনেক বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেন। এবার আলোচনায় থাকা রাসেল, মাশরাফির বাইরে অন্য কেউ হলেও অবাক হওয়ার নেই।
ক্রীড়াঙ্গন থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হয়েছেন অনেকেই। সালাম মুর্শেদী এবং নাজমুল হাসান পাপনও এবার মন্ত্রীত্ব পেতে পারেন বলে শোনা গেলেও, সেটা অন্য মন্ত্রণালয়ে পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কে পাচ্ছেন এটা জানতে আর কিছু সময় অপেক্ষা করতেই হচ্ছে ক্রীড়াঙ্গনকে।