নিজস্ব সংবাদাতা : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর- ৪ আসনে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট কারচুপি, ভোট গণনায় জালিয়াতি করে ফলাফল ঘোষণার অভিযোগে ভোট পুন:গণনার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন পরাজিত নৌকার প্রার্থী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান হেলাল।
মঙ্গলবার দুপুরে সরিষাবাড়ী শহরের শিমলাবাজার এলাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান হেলাল তার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। এ সময় লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকার তেজগাঁও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ মো: আবদুর রশীদ জামালপুর- ৪ সরিষাবাড়ী আসনে নৌকা মার্কার মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পর কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে দলের মধ্যে আভ্যন্তরীন বিরোধ সৃষ্টি করেন। তিনি শুরু থেকেই নির্বাচনকে প্রভাবিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে হিংসাত্মক ও ধংসাত্মকসহ নানা অপকৌশল গ্রহণ করেন। নির্বাচনী হলফনামায় তাঁর মালিকানাধীন কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে অবস্থিত বিলাসবহুল রিসোর্ট থাকার তথ্য গোপন করেন। প্রার্থীর ছোটভাই অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটান। নির্বাচনের দিন বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিরাগত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এনে ট্রাক প্রতীকের পক্ষে অন্যায় প্রভাব বিস্তার করেন। পৌরসভার বিএনপি অধ্যুষিত কেন্দগুলোতে বিএনপি নেতাদের সাথে গোপনে সমঝোতা করে কালোটাকা ব্যাবহার করে বিএনপি-জামায়াতের ভোটারদের ট্রাক মার্কায় ভোট সংগ্রহ করেন। বেশকিছু কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ট্রাকের প্রার্থী নিজে উপস্থিত থেকে গণহারে সিল মারেন।
মাহবুবুর রহমান হেলাল আরও জানান, ট্রাক প্রতীক বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ও নৌকাপাগল মানুষদের এলাকাছাড়া করার মতো ঘৃণ্য পথ বেছে নিয়েছে। ট্রাক প্রতীকের সমর্থক পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সরিষাবাড়ী অনার্স কলেজের উপাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান নৌকার সমর্থক ঢাকাস্থ ব্যবসায়ী ফজলুর কাছে মোবাইলে ২১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। চাঁদা না দিলে ঢাকা থেকে ধরে এনে হত্যা, বাড়িঘর তছনছ ও ব্যবসা করতে না দেয়ার করার হুমকি এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। নৌকার কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে হামলা-ভাঙচুর, মারধর, লুটতরাজ করা হচ্ছে। এতে করে ২০০১ পরবর্তী বিএনপি-জামাতের নৃশংসতা এবং মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারীদের পারিবারিক চেহারা উন্মোচিত হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যের এক পর্যায়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে তিনি ভোট গণনার কিছু কাট-ছাট করা কপি, কর্মকর্তার স্বাক্ষর না থাকা, অনিয়মের চিত্র ও একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধীদের ভূমিকায় বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, মারধর, হুমকি ও লুটতরাজের বিবরণ তুলে ধরেন। ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রার্থী হিসেবে তাঁকে কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি বলেও তিনি অভিযোগ করেন। দলের আদর্শবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত নেতাদের দল থেকে বহিষ্কার, আইনগত ব্যবস্থার মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত, তথ্য গোপন করায় ট্রাক প্রতীকের প্রার্থিতা বাতিল এবং প্রশাসনিকভাবে কাটছাট ও নয়-ছয় করে ট্রাক প্রতীকে বেশি ভোট দেখিয়ে নৌকাকে পরাজিত করার অভিযোগ তুলে তিনি পুনরায় নির্বাচন অথবা পুন:ভোট গণনার দাবী জানান।
সাংবাদিক সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. এ. লতিফ, উপজেলা বিআরডিবির সাবেক চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন পাঠান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রক্সি মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।