মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজাতে হবে। কোনো পদে নব্য হাইব্রিডদের জায়গা হবে না। যে আওয়ামী লীগ নেতা অর্থের কাছে বিক্রি হয়, সে আওয়ামী লীগ আমার দরকার নেই।
শনিবার (২০ জানুয়ারি) বিকেলে ফরিদপুর শহরের আলীপুর মোড়ে মুজিব সড়কে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আব্দুর রহমান বলেন, নির্বাচনে জয় পরাজয় আছে। নির্বাচনে জয়ের অনেক কৌশলও আছে। সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এই নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বী নির্বাচন করার জন্য অনেক স্বতন্ত্রকেও নির্বাচন করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমার একটা পরিসংখ্যান আছে এবং এই পরিসংখ্যানের কথা আগামী জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় আমি নিজে তুলব। যারা অর্থহীন স্বতন্ত্র ছিল তারা বিজয়ী হতে পারেনি। স্বতন্ত্র যারা যেখানে বিজয়ী হয়েছে অর্থের পাহাড় ঢেলে বিজয়ী হয়েছে। তারা ব্যক্তি হিসেবে বিজয়ী হয়নি। তাদের অর্থই বিজয়ী হয়েছে।
তিনি বলেন, আজ আমি আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে চাই এই সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে হবে। এই সংগঠনের মধ্যে কোনো অনুপ্রবেশকারীর জায়গা থাকবে না। কোনো নব্য হাইব্রিডের জায়গা এই সংগঠনে থাকবে না। সারা জীবন যারা আদর্শিক রাজনীতির জন্য মাঠে ময়দানে চিৎকার করেছে তারা যদি সামান্য অর্থের কাছে বিক্রি হয়ে যায় সেই আওয়ামী লীগের আমার দরকার নেই, শেখ হাসিনার দরকার নেই।
নিজের নির্বাচনী এলাকা ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী) আসন সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, আমি শুনেছি আমার নির্বাচনী এলাকায় ৯২ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে এবং ৫০ হাজার মানুষকে বিকাশ করে টাকা দেওয়া হয়েছে। ম্যাক্সিমাম জায়গায় আমার দলের নেতাকর্মীদের তাদের দলে ভিড়িয়েছে। নানাবিধ চক্রান্ত ষড়যন্ত্রের মধ্যে আমি বিজয়ী হয়েছি। বিজয়ী হওয়ার পর আমি বর্ধিত না আমি অহংকারী না, আমি বিজয়ী হওয়ার পরে আরও বেশি বিনয়ী হয়েছি।আব্দুর রহমান বলেন, আজকে এই ফরিদপুর, বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা, মধুখালী, ভাঙ্গা, সদরপুর, নগরকান্দা, সালথা ও চরভদ্রাসনে যারা আওয়ামী লীগ করে বিপথগামী হয়েছেন, যে কোনো কারণেই হোক আপনাদের বিবেকের কাছে আমি প্রশ্ন রাখি, আপনাদের আহ্বান জানাই যারা ভুল করে ভুল জায়গায় গিয়েছিলেন। তাদেরকে আমি করজোরে অনুরোধ করি আপনারা ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসে শৃঙ্খলার সাথে এই সংগঠনের কাজে নিয়োজিত হন।
তিনি বলেন, আপনারা যখন মন্ত্রী হিসেবে সম্বোধন করেন আমার কাছে অস্বস্তি মনে হয়। সারাজীবনের এক রাজপথের কর্মী হিসেবে নানা সংকট সম্ভাবনায় এই কণ্ঠে জয় বাংলা স্লোগান ধরেছি, বঙ্গবন্ধুর কথা বলেছি। সেই আব্দুর রহমান এখন মন্ত্রী মহোদয়, এটি আমার কাছে অনেক সময় বেদনার মনে হয়। আজকে আমি এই আওয়ামী লীগের, ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীর কাছে ‘রহমান ভাই’ হিসেবেই বেঁচে থাকতে চাই।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক বলেন, আপনারা জানেন গত নির্বাচনে কী হয়েছে। সেদিকে আমি যেতে চাই না। আমার কপাল খারাপ। জননেত্রী শেখ হাসিনা তার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ আমার প্রতি দেখিয়েছেন, এই ফরিদপুরবাসীর প্রতি দেখিয়েছেন। উনি রাজেন্দ্র কলেজের মাঠে এসেছেন নৌকা মার্কার ভোট চাওয়ার জন্য। আমার জীবনের চাওয়া-পাওয়ার আর কিছুই নাই।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক সুলতানা রোকেয়া সুলতানা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ ইশতিয়া, ফরিদপুর পৌসভার মেয়র অমিতাভ বোস প্রমুখ।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস দুই ভরি ওজনের স্বর্ণ দিয়ে তৈরি করা একটি চাবি এবং জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সভাপতি শামীম হক ও সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আরিফ কাচঘেরা বাক্সে তিন ভরি ওজনের স্বর্ণ দিয়ে নির্মিত একটি নৌকা তুলে দেন মন্ত্রী আব্দুর রহমানের হাতে।