মালয়েশিয়ার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ পেরাকের একটি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর গ্রেপ্তার হয়েছেন ৪১ জন রোহিঙ্গা। পেরাক প্রাদেশিক পুলিশের প্রধান মোহাম্মদ ইউশরি হাসান বাসরি সোমবার এএফপিকে নিশ্চিত করেছেন এ তথ্য।
বাসরি জানান, গত বৃহস্পতিবার পেরাকের বিদোর শহরের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে দাঙ্গা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। সেই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ১১৫ জন রোহিঙ্গা এবং ১৫ জন অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর মানুষ সেখান থেকে পালিয়ে যান। এই পলাতকদের সবাই পুরুষ।
বাসরি জানান, বিদোরের একটি পাম বাগানে আত্মগোপন করেছিলেন গ্রেপ্তার এই রোহিঙ্গারা। তাদের সবাইকে ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত অবস্থায় আটক করা হয়েছে।
‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, অন্যান্য পলাতকরা বিদোর এবং তাপাহ রোডের (পার্শ্ববর্তী শহর) পাম বাগান এবং জঙ্গলে আত্মগোপন করে আছে। পেরাক পুলিশ প্রদেশজুড়ে চিরুনি অভিযান শুরু করেছে। আশা করছি শিগগিরই তাদেরও ধরতে পারব।’
পলাতক রোহিঙ্গাদের মধ্যে ইতোমধ্যে একজন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন বলেও জানিয়েছেন বাসরি।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শত শত বছর ধরে আরাকান প্রদেশে বসবাসকারী এই জনগোষ্ঠীকে এখন পর্যন্ত সাংবিধানিক স্বীকৃতিও দেওয়া হয়নি।
২০১৭ সালে আরাকানের বেশ কয়েকটি পুলিশ স্টেশন ও সেনাছাউনিতে এক যোগে বোমা হামলা ঘটে। সশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) সেই হামলার দায়ও স্বীকার করে। তারপর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী।
ভয়াবহ সেই অভিযানের মুখে টিকতে না পেরে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। মূলত সেনা অভিযানের পর থেকেই নৌপথে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং থাইল্যান্ডে যাওয়ার হিড়িক পড়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে। প্রতি বছর অক্টোবর-নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত প্রচুর রোহিঙ্গা নৌপথে পাড়ি জমান। এই রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে প্রিয় গন্তব্য মালয়েশিয়া।
সাগরপথে কোনো রোহিঙ্গা দল এলে তাদের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রাখে মালয়েশিয়া। এসব আশ্রয়শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের পালানো অবশ্য নতুন নয়। এর আগে ২০২২ সালে পেনাংয়ের একটি আশ্রয়শিবির থেকে ৫২৮ জন রোহিঙ্গা পালিয়ে গিয়েছিল। তাদের অধিকাংশকেই পরে আটক করা হয়েছে।
সূত্র : এএফপি, ইরাবতী নিউজ