পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর থেকেই চলছে ভোটগণনা, সঙ্গে চলছে ফল প্রকাশ। এখন পর্যন্ত ১০০টিরও আসনে গণনা শেষে এগিয়ে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
পাকিস্তানের মিডিয়ার বরাত দিয়ে শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। এর আগে অবশ্য পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের প্রকাশ করা প্রাথমিক পরিসংখ্যানে নওয়াজ শরিফের দল সামান্য এগিয়ে ছিল বলে জানানো হয়েছিল।
মূলত ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর প্রায় ২৪ ঘণ্টা হতে চললেও খুবই ধীরে ফলাফল ঘোষণা হচ্ছে। আর এতেই অনেকে কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
রয়টার্স বলছে, শুক্রবার ১০০ টিরও বেশি আসনে ভোটগণনা সম্পন্ন হওয়ার পর কারাগারে বন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থক স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পাকিস্তানের নির্বাচনী ফলাফলে এগিয়ে রয়েছে বলে স্থানীয় মিডিয়া জানিয়েছে। আর ভোট গণনায় অস্বাভাবিক বিলম্বের জন্য মোবাইল ফোন পরিষেবা স্থগিত করাকে দায়ী করেছে দেশটির সরকার।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ বলেছে, ফলাফল ঘোষণা করা ১০৬টি আসনের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৪৭টি আসনে জিতেছে। এসব প্রার্থীদের বেশিরভাগই ইমরান খানের আনুগত্য করে। বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে মোট ২৬৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার বেলা ১টায় (বাংলাদেশ সময় ২টায়) পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন দেশটির জাতীয় পরিষদের ২৬৫টি আসনের মধ্যে ৭০টি আসনের ফলাফল ঘোষণা করে। এই ফলাফল অনুযায়ী, কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দলের সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ২৪টি আসনে জয়ী হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।
এছাড়া প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টিও ২৪টি আসনে জয় পেয়েছে বলে জানানো হয়েছে। আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ১৮টি আসনে জয় পেয়েছে। বাকিগুলো ছোট দল জিতেছে।
মূলত ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফকে (পিটিআই) দল হিসাবে বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া হয়নি। এমনকি তাদের নির্বাচনী প্রতীকও ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। আর তাই ইমরানের দলের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
বিশ্লেষকরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, এই নির্বাচনে কোনও দলই স্পষ্ট বিজয়ী নাও হতে পারে। মূলত বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ বন্ধ হওয়ার ১৮ ঘণ্টা পরে কিছু ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে, যা পাকিস্তানের যেকোনও নির্বাচনের জন্য বেশ অস্বাভাবিক।
রয়টার্স বলছে, ‘ইন্টারনেট সমস্যার’ কারণে ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হয়েছে বলে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) বিশেষ সচিব জাফর ইকবাল দাবি করেছেন। তবে এর চেয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
সরকার দাবি করেছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুরক্ষিত করার অংশ হিসাবে বৃহস্পতিবার নির্বাচনের আগে মোবাইল ফোন পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছিল এবং সেগুলোই এখন আংশিকভাবে চালু করা হয়েছে।
সদ্য সমাপ্ত এই নির্বাচনে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থিত প্রার্থী ও পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) প্রার্থীদের মধ্যে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) গত জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনে কে আসলে বিজয়ী হবেন তা স্পষ্ট না হলেও এটি নির্ধারণে পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর ক্ষমতাধর জেনারেলরা বেশ বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। স্বাধীনতার পর থেকে গত ৭৬ বছরে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশটিতে আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে মোট আসন ৩৩৬টি। এর মধ্যে ২৬৬ আসনে সরাসরি ভোট হয় (বৃহস্পতিবার ভোট হয়েছে ২৬৫টি আসনে)। আর ৭০টি আসন সংরক্ষিত। এর মধ্যে ৬০টি আসন নারীদের ও ১০টি আসন অমুসলিম প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত।
সরকার গঠন করতে কোনও দল বা জোটকে কমপক্ষে ১৬৯টি আসনে জয় নিশ্চিত করতে হবে।