Saturday, May 18, 2024
Homeদেশজুড়েজেলার খবরপাহাড়ের ঢালুতে টমেটো চাষ, অর্ধকোটি টাকা বিক্রির আশা কৃষক সাঈদের

পাহাড়ের ঢালুতে টমেটো চাষ, অর্ধকোটি টাকা বিক্রির আশা কৃষক সাঈদের

পাহাড়ের ঢালু জমিতে চার একর জমিতে টমেটো চাষ করে প্রায় অর্ধকোটি টাকা বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন কৃষক মো. আবু সাঈদ। যেখানে চলতি মৌসুমে জেলার অধিকাংশ টমেটো চাষি ভাইরাসের কবলে পরে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

সম্প্রতি খাগড়াছড়ির শান্তিপুরের সীমান্তঘেঁষা মেস্তরীর চর এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়ের ঢালে মাচায় ঝুলছে হলুদ-সবুজে মিশেল টমেটো। পাহাড়ের ওপর মাচায় সবুজ, হলুদ আর পাকা টমেটোগুলো সূর্যের আলোয় ঝলমল করছে। শ্রমিকদের সঙ্গে টমেটো গাছের পরিচর্যার পাশাপাশি গাছ থেকে পাকা টমেটো তুলছেন কৃষক মো. আবু সাঈদ।

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার শান্তিপুরের সীমান্ত ঘেঁষা মেস্তরীর চর এলাকায় প্রাথমিকভাবে ১২ একর পাহাড় লিজ নিয়ে ৪ একর ঢালু ভূমিতে টমেটো চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তিনি। নিজের অর্থনৈতিক সাফল্যের পাশাপাশি অনেক বেকার লোকের কর্মসংস্থান করেছেন এ স্বপ্নবাজ কৃষক।

আবু সাঈদ জানান, ঢাকা থেকে ২০২২ সালে এ এলাকায় এক বন্ধুর ফলজ বাগানে বেড়াতে আসেন তিনি। পাহাড়ের বিস্তীর্ণ জমিতে তামাক চাষ দেখে বিস্মিত হন। তখনই ব্যাপক সম্ভাবনাময় জমিতে তামাকের পরিবর্তে সবজিসহ অন্যান্য ফসল চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। 

অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি চার একর পাহাড়ের ঢালু জমিতে স্মার্ট-১২১৭ জাতের টমেটোর চারা রোপণ করেন। এ জাতের টমেটো গাছ প্রতি গড়ে ৮-১০ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। একর প্রতি গড় ফলন ৪০-৪৫ টন। ফল ডিম্বাকৃতির শক্ত এবং আকর্ষণীয় লাল বর্ণের হয়। একই সঙ্গে বীজ বপনের ৬০-৬৫ দিনের মধ্যেই ফল সংগ্রহ শুরু করা যায়। স্মার্ট-১২১৭ জাতের টমেটোর প্রতিটি গাছ টমেটোর ভারে নুইয়ে পরে। গাছ পরে যাওয়া ঠেকাতে বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে দিতে হয়। 

মো. আবু সাঈদের জমিতে ১০/১২ জন শ্রমিক মাসিক বেতনে স্থায়ীভাবে কাজ করার পাশাপাশি অস্থায়ী ভিত্তিতে আরও ৫/৭জন শ্রমিক কাজ করেন। পর্যায়ক্রমে একই জমিতে আরও বিভিন্ন জাতের সবজির উৎপাদন করা হবে বলে জানান মো. আবু সাইদ।  

এ জমি থেকে এক থেকে দেড় লাখ কেজি টমেটো বিক্রি করতে পারবেন জানিয়ে তিনি বলেন, মিড আরলি জাতের হওয়ার কারণে টমেটোর দর আশানুরূপ না হলেও চলমান বাজার দর হিসেবে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারবেন। টমেটো উৎপাদনে ১৬ লাখ টাকা খরচ হবে বলেও জানান এ কৃষি উদ্যোক্তা।

পাহাড়ের উঁচু ভূমিতে ফলজ বাগানের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিচর্যা করে সবজি চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব জানিয়ে আবু সাইদ বলেন, পাহাড়ের ঢালুতে টমেটো চাষ করায় রোগের প্রাদুর্ভাব কম দেখা গেছে। দেশের অন্যান্য স্থানে বর্ষা মৌসুমে জমি তলিয়ে যাওয়ায় ফসলের হানি ঘটে। বর্ষায় পাহাড়ের ওপর পানি জমে থাকে না। তাই এখানে সব ধরনের ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। তবে শুষ্ক মৌসুমে সেচের ব্যবস্থা করা একটু কষ্টসাধ্য। 

কৃষি উদ্যোক্তা মো. আবু সাইদের জমিতে কাজ করা শ্রমিক মো. আমির হোসেন বলেন, এখানে কাজ করে পাহাড়ের ঢালে সবজি চাষ আয়ত্ত করছি। পরবর্তীতে নিজেই উদ্যোগ গ্রহণ করে ফসলের চাষ করব।

কৃষি উদ্যোক্তা মো. আবু সাইদের এমন উদ্যোগ অনুকরণীয় উল্লেখ করে মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সবুজ আলী বলেন, বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ের ওপরে সবজি চাষ সহজেই করা যায়। শুষ্ক মৌসুমে অধিকাংশ জায়গায় সেচ দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় চাষ ব্যয়বহুল এবং কষ্টসাধ্য। তবে সমতল জমির পাশাপাশি পাহাড়ের ঢালুতে টমেটো চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। যার অনন্য দৃষ্টান্ত কৃষক মো. আবু সাঈদ। 

Most Popular

Recent Comments