ইসলামে প্রশান্তি খুঁজে পেয়েছেন নওমুসলিম এক জার্মান তরুণী। তার নাম মার্টিনা ওবারহোলজনার। ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণের পর তার নাম এখন মারিয়াম।চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) দুবাইয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং এবার রমজান মাসে রোজাও রাখছেন তিনি। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমস।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জার্মান প্রবাসী মার্টিনা ওবারহোলজনার এখন মারিয়াম নামে পরিচিত এবং এই বছরের শুরুতে ইসলাম গ্রহণের পর দুবাইতে এবার তিনি তার প্রথম রমজান পালন করছেন। ২৬ বছর বয়সী এই তরুণী পবিত্র কোরআনের জার্মান সংস্করণ অধ্যয়নের মাধ্যমে তার নতুন বিশ্বাসের শিক্ষার মধ্যে প্রশান্তি খুঁজে পেয়েছেন।
নিজের আধ্যাত্মিক যাত্রার প্রতিফলন করে এই মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ বলেন, ‘কিশোর বয়স থেকেই আমি ইসলামের প্রতি গভীর সংযোগ অনুভব করেছি। আমি যদিও খ্রিস্টান পরিবারে বড় হয়েছি, আমি সবসময় ইসলামের শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট ছিলাম। আমি শালীন পোশাক পরিধান করতাম এবং প্রায়ই শীলা (মাথার স্কার্ফ) পরিধান করতাম।’
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আমি দুবাইয়ের একটি ইসলামিক ইনফরমেশন সেন্টারে যাই এবং আনুষ্ঠানিকভাবে কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করি, এর মাধ্যমে আল্লাহর একত্ববাদে আমার বিশ্বাস এবং মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)-কে তাঁর রাসূল হিসেবে গ্রহণ করার ঘোষণা দিয়েছি।’
খালিজ টাইমস বলছে, ইসলাম গ্রহণের দিকে মারিয়াম যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৪ বছর বয়সে। সেসময় তিনি প্রথম তার নিজ শহর মিউনিখের একটি মসজিদে গিয়েছিলেন।
নিজের সেই কথা স্মরণ করে মারিয়াম বলছেন, ‘মসজিদে আন্তরিকতা ও উষ্ণতার সাথে আমাকে অভ্যর্থনা জানানো হয়েছিল এবং তাতে আমি অভিভূত হয়েছিলাম। সেখানে আমি যে সহানুভূতি অনুভব করেছি তা আমার ওপর স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে।’
সময়ের সাথে সাথে মারিয়াম নিজেকে মুসলিম বন্ধুবান্ধব এবং পরিচিতদের সাথে আরও যুক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘তাদের সম্পর্কে যা আমাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছিল তা হলো- তারা সর্বদা ছিলেন দয়ালু, সবচেয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে সাহায্যকারী মানুষ, যা আমার ইসলাম গ্রহণের অন্যতম প্রধান কারণ।’
দুই বোনের মধ্যে জন্ম নেওয়া মারিয়াম ২০২২ সালে বন্ধুদের সাথে ছুটি কাটাতে দুবাইয়ে এসেছিলেন। আর এখানে তিনি শহরটির প্রাণবন্ত সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হন। মারিয়াম বলছেন, ‘আমি এখানে আসার সাথে সাথেই এই শহরের প্রেমে পড়েছিলাম এবং জানতাম, আমি এটিকেই আমার থাকার জায়গা করতে চাই।’
পরের বছর যখন তিনি দুবাইয়ে চাকরির সুযোগ পান তখন তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়। যদিও পরে কোম্পানি তার প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় তিনি কিছুটা হতাশ হয়েছিলেন।
মারিয়াম বলেন, ‘আমি আমার পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে হতাশ এবং অনিশ্চিত বোধ করছিলাম। সেই দিনগুলোতে, আমি বিজনেস বে-তে থাকতাম, এবং আমার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে একটি মসজিদ দেখা যেত। যখনই মুয়াজ্জিনের আযান বাতাসে প্রতিধ্বনিত হতো, তখনই আমি আমার বারান্দায় ছুটে আসতাম। নামাজে আহ্বানের নির্মল সেই সুর আমার ওপর প্রশান্তিদায়ক প্রভাব ফেলেছিল।’
আর তখনই মারিয়াম ইসলামকে আরও গভীরভাবে অধ্যয়ন করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন, ‘এরপর আমি একজন বন্ধুর কাছে যাই এবং পবিত্র কোরআনের একটি জার্মান অনুবাদ দিতে অনুরোধ করি।’
২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে মারিয়াম কয়েক সপ্তাহের জন্য গিয়েছিলেন। আর সেখানে তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে নিজেকে ইসলামিক সংস্কৃতিতে নিমজ্জিত করেন।
এরপর মারিয়াম তার পরিবারের সাথে দেখা করতে গত বছরের আগস্টে জার্মানিতে ফিরে যান। কিন্তু দুবাইয়ে ফিরে যাওয়ার কথা তার মাথায় অটল অবস্থায় থেকে যায়। ফিরে আসতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ মারিয়াম এরপর আবারও চাকরির জন্য আবেদন করতে শুরু করেন এবং শেষমেষ তিনি ভালো সুযোগও পেয়ে যান।
অবশেষে ২০২৩ সালের অক্টোবরে মারিয়াম দুবাইতে চলে আসেন। এখানে প্রথমবার কোরআন পড়তে শুরু করার সাথে সাথেই তিনি এক অবর্ণনীয় সংবেদন অনুভব করেন। সেকথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমি সেই অনুভূতি প্রকাশ করতে পারব না। মাত্র ৫০ পৃষ্ঠার পড়ার পরই আমি মনে মনে বুঝতে পারলাম, আমি ইসলাম গ্রহণ করতে চাই।’
আর মারিয়ামের সেই যাত্রা চলতি বছরের শুরুর দিকের এক শুক্রবারে কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করার মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
খালিজ টাইমস বলছে, মরিয়ম এখন ইসলাম সম্পর্কে তার জ্ঞানের গভীরতা আরও বাড়ানোর এবং রমজানের রুটিন মেনে চলার দিকে মনোনিবেশ করছেন। তিনি বলছেন, ‘আমি সেহরির জন্য সময়মতো ঘুম থেকে উঠি এবং সন্ধ্যায় আমার অ্যাপার্টমেন্টে ইফতার করি। আমার সেহরিতে সাধারণত একটি কলা বা দই থাকে। কারণ ভোর ৪টায় সেহরিতে চিকেন বিরিয়ানি খাওয়াটা বেশি বেশিই হয়ে যায়।’
এদিকে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম লিঙ্কডইনে দেওয়া এক পোস্টে মারিয়াম দুবাইতে একজন মুসলিম হিসাবে তার প্রথম রমজান উপভোগ করার বিষয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছেন।
তিনি লিখেছেন, ‘রমজান মানে শুধু খাবার ও পানীয় পরিহার করা নয়। এটি আমাদের ধৈর্য, কৃতজ্ঞতা এবং আমাদের সম্প্রদায়কে বিনিময়ে আরও কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার গুরুত্ব শেখায়। আসুন ব্যক্তিগতভাবে এবং পেশাগতভাবে আমরা সেরা মানুষে পরিণত হই।’