ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্য নিয়ে অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি এই আগ্রাসনে ইতোমধ্যেই ৩৩ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে এবং এর জেরে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে দেশটি।
এমন অবস্থায় ফিলিস্তিনের গাজার বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, গাজার বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করুন, না হলে মার্কিন নীতি পরিবর্তন হবে।
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা যুদ্ধে চলমান মার্কিন সমর্থন ও সহায়তা বৃদ্ধি পাবে কিনা তা বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যু রোধে ‘নির্দিষ্ট, দৃঢ় পদক্ষেপের’ ওপর নির্ভর করছে বলে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে জানিয়ে দিয়েছে।
রয়টার্স বলছে, গত সোমবার ইসরায়েলি হামলায় ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিউসিকে)-এর সাতজন কর্মী মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সাথে ফোনে কথা বলেন।
মূলত গাজায় সহায়তা কর্মীদের ওপর মারাত্মক ইসরায়েলি হামলার পরে বাইডেন-নেতানিয়াহুর এই ফোনালাপ হয়। অবশ্য ওই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েলে মার্কিন সহায়তা প্রদানে শর্ত যোগ করার জন্য ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা বাইডেনকে নতুন এই আহ্বান জানাতে উৎসাহিত করেন।
ইসরায়েল বলেছে, গত সোমবারের ওই হামলাটি ছিল ভুল।
রয়টার্স বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের আজীবন সমর্থক এবং ক্রমাগত বৈশ্বিক চাপের মুখেও গাজায় আগ্রাসন চালানো এই দেশটিতে সাহায্য বন্ধ করার বা দেশটিতে অস্ত্রের চালান বন্ধ করার চাপকে প্রতিহত করে এসেছেন তিনি।
এরপরও বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো ইসরায়েলকে এই সতর্কবার্তা দিলেন বাইডেন। সহায়তা বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সম্ভাব্য এই হুমকি এমন একটি বিষয় যা গাজায় প্রায় ছয় মাস ধরে চলা যুদ্ধের গতিশীলতা পরিবর্তন করতে পারে।
এদিকে বৃহস্পতিবার বাইডেন ও নেতানিয়াহুর ফোন কলটি প্রায় ৩০ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল। উভয় নেতার ফোন কল সম্পর্কে হোয়াইট হাউস বলেছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ‘বেসামরিক ক্ষতি, মানবিক দুর্ভোগ এবং সাহায্য কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য ইসরায়েলকে নির্দিষ্ট, কংক্রিট এবং পরিমাপযোগ্য পদক্ষেপ ঘোষণা করতে এবং সেগুলো বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন।’
হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ‘স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, গাজার ব্যাপারে মার্কিন নীতি ঠিক কী হবে তা নির্ধারণ করা হবে ইসরায়েলের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের বিষয়ে আমাদের মূল্যায়নের মাধ্যমে।’
রয়টার্স বলছে, ওয়াশিংটন ইসরায়েলের শীর্ষ অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ এবং বাইডেন প্রশাসন এতোদিন বেশিরভাগ সময়ই জাতিসংঘে ইসরায়েলকে কূটনৈতিক ঢালের মাধ্যমে রক্ষা করে এসেছে।
এদিকে বৃহস্পতিবারের এই ফোনকলের পরে এক ব্রিফিংয়ে কথা বলেন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি। অবশ্য সেখানে ইসরায়েল এবং গাজার প্রতি মার্কিন নীতিতে কোন ধরনের সুনির্দিষ্ট পরিবর্তন আসবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে অস্বীকার করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, ওয়াশিংটন ‘সামনের কয়েক ঘণ্টা ও দিনগুলোতে’ ইসরায়েলি পদক্ষেপের ঘোষণা দেখতে পাবে বলে আশা করছে।
এদিকে গাজার বেসামরিক মানুষকে রক্ষার বিষয়ে হোয়াইট হাউসের কথারই পুনরাবৃত্তি করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলের কাছ থেকে কোনও পরিবর্তন না দেখে, তবে মার্কিন নীতিতে পরিবর্তন হবে।
অন্যদিকে মার্কিন নীতিতে সম্ভাব্য পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে চাইলে নেতানিয়াহুর মুখপাত্র তাল হেনরিচ ফক্স নিউজকে বলেছেন: ‘আমি মনে করি এটি এমন কিছু যা ওয়াশিংটনকে ব্যাখ্যা করতে হবে’।