উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ ময়দান হিসেবে খ্যাত দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ মাঠে লাখো মুসল্লি পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করবেন। এ লক্ষ্যেই প্রস্তুতি গ্রহণ করছে দিনাজপুর জেলা প্রশাসন।
সবুজ ঘাসে মোড়ানো দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ মাঠের আয়তন ২২ একর। মাঠের পশ্চিমে লাল খয়েরি আর সাদা রংয়ের মিশ্রণে ৫১৬ ফুট দৈর্ঘ্যের সুউচ্চ ঈদগাহ মিনারটি যে কারও নজর কাড়ে। বাংলাদেশ তথা এশিয়া মহাদেশের বৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে এই মাঠে। আসন্ন ঈদুল ফিতরে লাখো মুসল্লির নামাজ আদায়ের জন্য গোর-এ-শহীদ মাঠ প্রস্তুত করছে দিনাজপুর জেলা প্রশাসন। এই ময়দানে নামাজ আদায় করতে আসা দূরের মুসল্লিদের জন্য থাকছে বিশেষ দুটি ট্রেন।
আয়োজকরা জানান, গোর-এ-শহীদ ময়দানে মিনারটি তৈরি হবার পরে ২০১৭ সালে প্রথম বৃহৎ পরিসরে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিবারের ন্যায় এবারও যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। সকাল ৯টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। মাঠে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। র্যাব, পুলিশ, আনসার সদ্যসরা ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করবেন। মাঠে প্রবেশের জন্য মোট ১৯টি গেট তৈরি করা হয়েছে। এসব গেটে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। থাকবে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করা হবে।
সরেজমিনে মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি মাঠে মাটি ভরাট, ধোয়া-মোছা, পানি ছেটানোসহ বিভিন্ন ধরনের সংস্কারমূলক কার্যক্রম চলছে। মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওয়াচ টাওয়ার নিমার্ণ করা হয়েছে। সুপেয় পানি ও অজুখানার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদের দিন সকাল ৯টায় গোর-এ-শহীদ মাঠে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে ইমামতি করবেন মাওলানা শামসুল ইসলাম কাসেমী।
শহরের রামনগর এলাকার বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম বলেন, আমাদের জেলায় এত বড় ঈদগাহ মিনার আর এত বড় ঈদ জামাত হয় এটা আমাদের জন্য অবশ্যই গর্বের বিষয়। বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে মুসল্লিরা ঈদের নামাজ পড়তে আসে, অনেকের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ হয়।
শহরের মর্ডান মোড় এলাকার মুসল্লি রায়হান ইসলাম বলেন, এখানে এক সঙ্গে লাখ লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। আশপাশের জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লিরা এখানে নামাজ আদায় করতে আসেন। জেলার বাইরে থেকে আসা মুসল্লিদের জন্য দুটি স্পেশাল শাটল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটা অনেক ভালো উদ্যোগ।
এশিয়া উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় মিনার ও দেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মাঠের উপদেষ্টা জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি বলেন, ২০২৩ সালে পবিত্র ঈদুল ফিতরে এই মাঠে এক সঙ্গে ৬ লক্ষাধিক মানুষ নামাজ আদায় করেছিল। গত ঈদুল আজহায় আশপাশের জেলা ও উপজেলাগুলো থেকে আগত মুসলিদের সুবিধার্থে দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এবার পবিত্র ঈদুল ফিতরেও দুটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে। বিশাল এই জামাতে দিনাজপুর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুসল্লিরা যেন নামাজে অংশ নিতে পারেন এ জন্য প্রচার প্রচারণা ও নিরাপত্তার বিষয়ে বরাবরের মতোই জোর দেওয়া হয়েছে।
ঈদ স্পেশাল দুটি ট্রেনের সময়সূচী
গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে দেশের সবচেয়ে বড় জামাত অনুষ্ঠিত করার লক্ষ্যে দুটি বিশেষ ট্রেন থাকছে। একটি ট্রেন ঠাকুরগাঁও থেকে ছেড়ে সেতাবগঞ্জ হয়ে দিনাজপুর এবং আরেকটি পার্বতীপুর থেকে ছেড়ে চিরিরবন্দর থেকে দিনাজপুর আসবে। ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদের দিন ট্রেনটি ভোর ৫টায় ছাড়বে। ট্রেনটি ঠাকুরগাঁওয়ের শিবগঞ্জ, পীরগঞ্জ, দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ, মঙ্গলপুর ও কাঞ্চন ট্রেন স্টেশনে যাত্রা বিরতী দিয়ে সকাল সোয়া ৭টায় দিনাজপুর স্টেশনে আসবে। অপরদিকে পার্বতীপুরে সকাল ৬টায় ট্রেনটি ছেড়ে মন্মথপুর, চিরিরবন্দর, কাউগাঁওয়ে যাত্রাবিরতী দিয়ে সকাল পৌনে ৭টায় দিনাজপুর স্টেশনে এসে থামবে। অপরদিকে নামাজের পর সোয়া ৯টায় পার্বতীপুরমুখী ও সাড়ে ৯টায় ঠাকুরগাঁও মুখী ট্রেনটি দিনাজপুর স্টেশনে ত্যাগ করবে।
উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে এই মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে ময়দানে বড় কোনো মিম্বর ছিল না। ২০১৫ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা ও অর্থায়ন করেন। মিনারটি তৈরি হয়েছে মোগল স্থাপত্য রীতিতে। এর মেহরাবের উচ্চতা ৫৫ ফুট। ৫২ গম্বুজ বিশিষ্ট ঈদগাহ মিনার রয়েছে। দুই প্রান্তে দুটি মিনারের উচ্চতা ৬০ ফুট। মাঝখানের দুটির উচ্চতা ৫০ ফুট। আর টাইলস করা মেহরাবের উচ্চতা ৪৭ ফুট। এতে খিলান রয়েছে ৩২টি। প্রতিটি গম্বুজে আছে বৈদ্যুতিক বাতি। মসজিদে নববি, কুয়েত, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের স্থাপনার আদলে তৈরি মিনারটির নির্মাণকাজে ব্যয় হয়েছিল প্রায় চার কোটি টাকা।