অস্তিত্ব সংকটে শশারিয়াবাড়ি ও ঢাকা খালভয়াবহ বিপর্যয়ের পথে প্রাকৃতিক ভারসাম্য: উদ্ধার ও খনন জরুরী

রুহুল আমিন : প্রকৃতি প্রদত্ত ঐতিহ্যবাহী শশারিয়াবাড় ও ঢাকা খাল এক সময়ে মৎস্য সম্পদে ছিল ভরপুর। চাঙ্গা ছিল জলজ অর্থনীতি। যা এখন শুধু’ই স্মৃতির পাতায়। এ খালে বিভিন্ন স্থাপনা উত্তোলন করায় জলজ অর্থনীতি ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য এখন ভয়াবহ বিপর্যয়ের পথে। প্রতিনিয়ত পুনরুদ্ধার সংস্কার ও সংরক্ষণের কথা চলছে জনতার মুখে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শশারিয়াবাড়ি খাল’টি ছিল যমুনার শাখা নদী, আর ঢাকা খাল’টি ছিল পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ। ব্রিটিশ আমলে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় ও কালের পরিক্রমায় এ নদ-নদীতে পলিমাটি পড়ে নাব্যতা কমে যায়। এরপর থেকে নদ-নদী দু’টো ঢাকা-খাল ও শশারিয়াবাড়ি খাল হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে স্থানীয়দের কাছে। (বর্তমানে ঢাকা-খাল’টি মলমগঞ্জ খাল নামেও পরিচিত) এ ঢাকা খাল’টি অঞ্চল ভেদে একেক এলাকায় একেক নামে পরিচিত। যথা গুলুরঘাট খাল, চিকাজানি খাল, দাসপাড়া খাল, মলমগঞ্জ খাল। নাব্যতা হারালেও এ সব খালের সংযোগ এবং পানির উৎস ছিলো ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা। সারাবছর পানিতে টই-টম্বুর থাকতো। যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌকা পারাপার ছিল। এ অঞ্চলের ধান, পাট, গমসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি
নৌকা যোগে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন বন্দর পর্যন্ত চলাচল করতো। এ জন্য’ই মলমগঞ্জ খাল ঢাকা খাল হিসেবে পরিচিত এলাকার মানুষের কাছে। ৯০ দশকের পর থেকে এ সব খালে বিভিন্ন স্থাপনা উত্তোলন ও অপরিকল্পিতভাবে কয়েকটি কাঁচা, পাকা সড়ক নির্মাণ করে এর পানি প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন চলাচল সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয় ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভিন্ন তথ্য, এ জনগুরুত্বপূর্ণ খাল দু’টি সরকারি রেকর্ডে নেই। খাল দু’টি আর ও আর এবং বিআরএস রেকর্ডে ভুল তথ্য দিয়ে অনেকেই ব্যক্তি মালিকানায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এরপর থেকে দিন দিন বসতবাড়ি, দোকানপাট সহ নানা স্থাপনা তৈরি করে খালের জলজ পরিবেশের বারোটা বাজিয়েছে। এ ঢাকা খাল’টি গুলুর ঘাট থেকে চিকাজানি, এ কে এম কলেজ, ডালবাড়ি, খাদ্য গুদাম, দাসপাড়া, মোল্লাপাড়া হয়ে খরমা নয়াপাড়া থেকে একটি টঙ্গের আলগা, মোশারফ গঞ্জ হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে,অপরদিকে নয়াপাড়া থেকে আরেকটি শাখা মোজাআটা, হারিয়াবাড়ি মুকশিমলা, কুমারপাড়া হয়ে দক্ষিনে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার সঙ্গে সংযুক্ত বুলবুলির খালে মিলিত হয়। ইসলামপুর উপজেলার মুরাদাবাদ গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ আলহাজ্ব আব্দুর রহিম মাস্টার বলেন, সমস্ত মালামাল সড়ক পথে আনা-নেওয়া করা হয়। অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনে সড়কে দুর্ঘটনার শঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে সড়কের।কিন্তু পানি পথ ব্যবহার করলে সড়ক হবে নিরাপদ কমবে দুর্ঘটনা। উপজেলার ৮০% ভাগ কৃষি জমি আধুনিক সেচ সুবিধা থাকলেও খালের অভাবে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। অনেক সময় সেচ মেশিনে পানি তুলতে সমস্যা দেখা দেয়। বসতবাড়ির নলকূপে পানি থাকছে না। ফসলি জমি মাটির উর্বরতা হারিয়ে ফেলছে। আশানুরুপ উৎপাদনও হচ্ছে না। তাই স্থানীয় কৃষকরা খাল দু’টো পুনরুদ্ধার করে খনন করার জন্য গত কয়েক বছর ধরে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে। ইসলামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এ এল এম রেজুয়ান আহমেদ বলেন, খালের নাব্যতা সংকট ও পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষি ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য ভয়াবহ বিপর্যয়ের পথে। মানব সৃষ্ট এ সমস্যার সম্মুখীন হয়ে ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জবাসী খালের অভাব বুঝতে শুরু করেছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা “ফাউন্ডেশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট”(এফসিডি)এর নির্বাহী পরিচালক রুহুল আমিন হারুন বলেন,খাল দু’টো উদ্ধার হলে কৃষি,বাণিজ্য ও জলজ অর্থনীতিতে যেমন অপার সম্ভাবনাময় হয়ে ওঠবে তেমনি দৃষ্টিনন্দনও হবে। জরুরী ভিত্তিতে খালগুলো উদ্ধার করার জন্য আমাদের সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। সংস্থা’র পক্ষ থেকে জনসচেতনতা মূলক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে।ইতোমধ্যে খাল উদ্ধারের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে আমরা গণস্বাক্ষর অভিযান করেছি এবং স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সম্প্রতি একটি আবেদনও দেওয়া হয়েছে। খাল ভরাট করে জমির শ্রেণী পরিবর্তন সম্পর্কিত বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ইসলামপুর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) বলেন, খালটি রেকর্ডিও সম্পত্তি। রেকর্ডিও মালিকরা যা খুশী তাই করতে পারেন। তাতে আমাদের করার কিছু নেই। তবে,জনস্বার্থের বিঘœ ঘটে এমন কাজ করা উচিত নয়।