বন্দিদের মুক্তি-আগাম নির্বাচনের দাবিতে ইসরায়েলজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা প্রায় সাত মাস ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাকেও লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।

তবে এরপরও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হাতে আটক থাকা বেশিরভাগ বন্দিকেই উদ্ধার করতে পারেনি ইসরায়েল। এই পরিস্থিতিতে গাজায় আটক বন্দিদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে ইসরায়েলে রাস্তায় বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ।

এসময় তারা ইসরায়েলে আগাম নির্বাচনেরও দাবি জানান। রোববার (২৮ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় আটক বন্দিদের মুক্তির দাবিতে এবং আগাম নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে শনিবার হাজার হাজার মানুষ ইসরায়েলজুড়ে বিক্ষোভ করেছেন। ইসরায়েলি সম্প্রচার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলের কাপলান স্কোয়ারে জড়ো হন এবং গাজায় ফিলিস্তিনি উপদলের সাথে বন্দি বিনিময় চুক্তি এবং আগাম নির্বাচনের দাবি জানান।

সম্প্রচার কর্তৃপক্ষের মতে, গাজায় আটক বন্দিদের পরিবারও এদিনের বিক্ষোভে অংশ নেয় এবং বিক্ষোভকারীদের সামনে বক্তৃতা দেয়।

ইসরায়েলি সংবাদপত্র ইয়েদিওথ আহরোনোথ জানায়, বিক্ষোভের একপর্যায়ে কাপলান স্কোয়ারে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এছাড়া আরও হাজার হাজার ইসরায়েলি তেল আবিবের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে বিগিন স্ট্রিটেও জড়ো হয়েছিলেন।

অনেক লোক পশ্চিম জেরুজালেমে ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগের বাড়ির কাছেও বিক্ষোভ করেছেন বলে ইয়েদিওথ আহরোনোথ জানিয়েছে। এসময় তারা গাজায় আটক থাকা ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনার দাবির পাশাপাশি আগাম নির্বাচনের আহ্বানও জানান।

এছাড়া হাজার হাজার ইসরায়েলি সিজারিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনের কাছে এবং হাইফায়ও হাজার হাজার ইসরায়েলি বিক্ষোভ করেছেন।

আনাদোলু বলছে, হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডের প্রকাশিত একটি ভিডিওতে গাজায় আটক দুই বন্দিকে ইসরায়েলি সরকারের কাছে তাদের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য বন্দি বিনিময় চুক্তি করার দাবি জানাতে দেখা যাওয়ার পর ইসরায়েলে বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়েছে।

ইসরায়েলি সংবাদপত্র ইয়েদিওথ আহরোনোথ জানিয়েছে, ভিডিওটির প্রতিক্রিয়ায় বন্দিদের পরিবার এক বিবৃতিতে বলেছে: ‘ইসরায়েলকে অবশ্যই রাফাহ (আক্রমণ) বা (হামাসের সাথে) চুক্তির মধ্যে যেকোনও একটি বেছে নিতে হবে।’

এছাড়া এই পরিবারগুলো গাজায় আটক বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য সরকারি সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, এমনকি যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে হলেও এই পথে হাঁটার দাবি জানিয়েছে তারা।

তেল আবিব বিশ্বাস করে, গাজায় এখনও ১৩৪ জন ইসরায়েলি বন্দি আটক রয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েল তার কারাগারগুলোতে প্রায় ৯ হাজার ফিলিস্তিনিকে আটকে রেখেছে।

অবশ্য ইসরায়েলি মিডিয়া ২৪০ থেকে ২৫৩ ইসরায়েলি বন্দির গাজায় আটক থাকার কথা বলে থাকে। যার মধ্যে তিনজনকে ইসরায়েল মুক্ত করেছিল এবং ১০৫ জনকে হামাস গত বছরের নভেম্বরে বন্দি বিনিময় চুক্তির সময় মুক্তি দিয়েছিল। এছাড়া ইসরায়েলি হামলার কারণে আরও ৭০ জন বন্দির নিহত হওয়ার কথা বলে থাকে হামাস।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।

এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল গাজার ওপর ব্যাপকভাবে অবরোধ আরোপ করে রেখেছে। এর ফলে এই ভূখণ্ডের জনগোষ্ঠী বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দারা অনাহারের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন।

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৭৭ হাজারের বেশি মানুষ।

এছাড়া ইসরায়েল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে।

গত জানুয়ারিতে এই আদালতের দেওয়া এক অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে তেল আবিবকে গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদানের নিশ্চয়তা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

তবে এরপরও নেতানিয়াহু গাজায় ইসরায়েলি অভিযান চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সমস্ত বন্দিকে ইসরায়েলে ফিরিয়ে আনা এবং হামাসকে ধ্বংস না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।