সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে এক হামলাকারীর ধনুক থেকে ছোড়া তীরের আঘাতে দেশটির এক পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। শনিবার দূতাবাসের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ওই কর্মকর্তাকে লক্ষ্য করে তীর ছোড়েন হামলাকারী। পরে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে হামলাকারী নিহত হয়েছেন।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আইভিকা ড্যাসিক সাংবাদিকদের বলেছেন, আততায়ীকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে এই ঘটনাকে সার্বিয়ার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলা বলে অভিহিত করেছেন তিনি।
ড্যাসিকের বরাত দিয়ে সার্বিয়ান বার্তা সংস্থা তানজুগ বলেছে, আহত পুলিশ সদস্যের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বর্তমানে তার অস্ত্রোপচার চলছে। তবে হামলায় দূতাবাসের কোনো কর্মী আহত হননি বলে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
সার্বিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, যে পুলিশ কর্মকর্তাকে আক্রমণ করা হয়েছিল, তার ঘাড়ে তীর লেগেছে। পরে হামলাকারীকে লক্ষ্য করে কয়েকটি গুলি চালান পুলিশ কর্মকর্তারা। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন তিনি।
এক বিবৃতিতে মন্ত্রী ড্যাসিক বলেছেন, এটি সার্বিয়ার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলা। তিনি বলেন, ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে হামলার এই ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের ব্যাপারে নিরাপত্তা সংস্থার কাছে আগে থেকে তথ্য ছিল। তারা ওয়াহাবি সংগঠনের সাথে জড়িত। তিনি বলেন, আমরা ওয়াহাবি সংগঠনের কথা বলছি। কিন্তু এটি এখনও নিশ্চিত নয়।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বেলগ্রেডে ইসরায়েলি দূতাবাসের কাছাকাছি এলাকায় সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা করা হয়েছে। এই ঘটনার পর দূতাবাস বন্ধ রয়েছে এবং দূতাবাসের কোনো কর্মী আহত হননি। হামলার ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
গত বছরের অক্টোবরে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলার পর বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলি সব দূতাবাসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। গত মাসে স্টকহোমে ইসরায়েলের দূতাবাসের কাছে গুলির শব্দ শোনা যায়।
এছাড়া জানুয়ারির শেষের দিকে স্টকহোমে ইসরায়েলি দূতাবাসের কাছে একটি তাজা বিস্ফোরক ডিভাইস ধ্বংস করে সুইডেনের বোমা স্কোয়াড। পরবর্তীতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে ওই বিস্ফোরক ডিভাইস দূতাবাসের কাছে রাখা হয়েছিল বলে জানায়। গত মার্চে নেদারল্যান্ডসের পুলিশ হেগে ইসরায়েলি দূতাবাসে জ্বলন্ত বস্তু নিক্ষেপ করেছেন সন্দেহে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ঢুকে হামলা চালায় গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাসের শত শত যোদ্ধা। ওই হামলায় ইসরায়েলে এক হাজার ২০০ জনের বেশি নিহত হন; যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির পরিসংখ্যান বলছে, ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ২৫২ জনকে ধরে নিয়ে গাজায় জিম্মি করে রাখে হামাস। তাদের মধ্যে এখনও ১২১ জন গাজায় জিম্মি অবস্থায় রয়েছেন। এছাড়া জিম্মিদের অন্তত ৩৭ জন নিহত হয়েছেন বলে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে।
হামাসের হামলার দিনই গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী। সাত মাসের বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধে গাজায় ৩৭ হাজার ৮৩৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে সেখানকার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স, আলজাজিরা, বিবিসি।