ইসমাইল হানিয়া : ইরানে গুপ্তহত্যার শিকার এই হামাস নেতা কে?

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াহকে রাজধানী তেহরানে হত্যা করা হয়েছে বলে ইরানের আধাসামরিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনী জানিয়েছে।

হামাসও তাদের এই নেতার নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছে। একইসঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে হামাস। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে কেউ এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেনি।

তবে এই ঘটনার জন্য সন্দেহ ইসরায়েলের দিকেই রয়েছে। ইহুদিবাদী এই দেশটি গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় আগ্রাসন চালাচ্ছে এবং হানিয়া ও হামাসের অন্যান্য নেতাদের হত্যা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছিল ইসরায়েল।

ইসমাইল হানিয়া কে ছিলেন?

ইসমাইল আবদেল সালাম হানিয়া, যার ডাক নাম আবু আল-আবদ, জন্মগ্রহণ করেছিলেন ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে। তিনি হামাস আন্দোলনের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান এবং ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ সরকারের দশম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

ইসরায়েল ১৯৮৯ সালে তাকে তিন বছর বন্দি করে রাখে। এরপর তাকে মারজ আল-জুহুর নামের ইসরায়েল এবং লেবাননের মধ্যকার একটি নো-ম্যানস-ল্যান্ডে নির্বাসিত করা হয়। সেখানে তিনি ১৯৯২ সালে বেশ কয়েকজন হামাস নেতার সাথে অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে একটি পুরো বছর কাটিয়েছিলেন।

নির্বাসনে থাকার পর তিনি গাজায় ফিরে আসেন এবং ১৯৯৭ সালে হামাস আন্দোলনের আধ্যাত্মিক নেতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনের অফিসের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন, যা তার অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে।

২০০৬ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ পশ্চিম তীর এবং গাজায় সংসদীয় নির্বাচন আয়োজন করে এবং সেসময় হানিয়া হামাসের সংসদীয় নেতা ছিলেন। ইসলামপন্থি এই গোষ্ঠী নির্বাচনে আশ্চর্যজনক বিজয় অর্জন করে এবং হানিয়া ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী’ হন।

কিন্তু প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের দল ফাতাহ এবং হামাসের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে আব্বাস ২০০৭ সালে হামাস সরকার ভেঙে দেন। হানিয়া তার সেই বিতর্কিত ডিক্রি মেনে নেননি এবং গাজা থেকে তার শাসন চালিয়ে যান। অন্যদিকে ফাতাহ ফিলিস্তিনের আরেক অংশ পশ্চিম তীরে কর্তৃত্ব বজায় রাখে।

বিবিসি বলছে, ২০০৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি হামাস তাকে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করে এবং একই মাসের ২০ তারিখ তিনি ওই পদে নিযুক্ত হন। এক বছর পর ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে হানিয়াকে বরখাস্ত করেন।

কারণ হামাসের সামরিক শাখা ইজ আল-দিন আল-কাসাম ব্রিগেডস গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে আব্বাসের ফাতাহ আন্দোলনের প্রতিনিধিদের বহিষ্কার করে। সেই সহিংসতায় অনেকে মারা যান।

হানিয়া এরপর বেশ কয়েকবার ফাতাহ আন্দোলনের সাথে সমঝোতার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ৬ মে থেকে তিনি হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর চেয়ারম্যান হিসাবে ইসমাইল হানিয়া কাতারে বসবাস করতেন এবং তাকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী এই গোষ্ঠীটির সামগ্রিক নেতা হিসাবে দেখা হতো।

২০১৭ সালে গাজায় হামাসের নেতা হিসাবে হানিয়া পদত্যাগ করেন এবং এতে ইয়াহিয়া সিনওয়ারের উত্থানের পথ প্রশস্ত হয়। একই বছর খালেদ মেশালের কাছ থেকে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন হানিয়া।

তিনি ছিলেন ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর আন্তর্জাতিক কূটনীতির কঠোর ও স্পষ্টভাষী কণ্ঠ। চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনে তার তিন ছেলেও ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছিল।

কিন্তু কঠোর বক্তৃতা সত্ত্বেও গাজার অভ্যন্তরে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীর আরও কট্টরপন্থি সদস্যদের তুলনায় অনেক কূটনীতিক হানিয়াকে মধ্যপন্থি হিসাবেই দেখতেন।