আমরা প্রায়ই ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে দুর্বোধ্য হাতের লেখার মুখোমুখি হই। অস্পষ্ট, দ্রুত লেখা এই প্রেসক্রিপশনগুলো পড়া বেশিরভাগ মানুষের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। এই সমস্যার সমাধানে এবার সাহায্য করতে আসছে চ্যাটজিপিটি! আপনি যদি ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন পড়তে না পারেন, তাহলে এখন চ্যাটজিপিটি আপনাকে ওষুধ এবং অন্যান্য নির্দেশনা বুঝতে সহায়তা করবে।
২০২২ সালের নভেম্বরে যখন চ্যাটজিপিটি আত্মপ্রকাশ করে, তখন থেকেই এটি প্রযুক্তি জগতে আলোড়ন তোলে। ওপেনএআই নির্মিত এই অত্যাধুনিক চ্যাটবট অল্প সময়ের মধ্যেই বহুমুখী দক্ষতা অর্জন করে এবং ব্যবহারকারীদের মন জয় করে। লেখালেখি, প্রোগ্রামিং, অনুবাদ, এমনকি জটিল বিষয় ব্যাখ্যা করার মতো অনেক কাজে দক্ষ চ্যাটজিপিটি। তবে, এআই টুল হিসেবে এর প্রয়োগের ক্ষেত্র ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে, এবং এখন এটি ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের মতো কঠিন পাঠোদ্ধারেও সক্ষম।
চ্যাটজিপিটির কীভাবে কাজ করে?
চ্যাটজিপিটি একটি এআই-চালিত অ্যাপ্লিকেশন, যা ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ছবি, টেক্সট এবং অডিও ফাইল গ্রহণ করতে পারে। এসব ইনপুটের ভিত্তিতে এটি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়, তথ্য সরবরাহ করে, এমনকি সমস্যার সমাধান করে। এর ব্যবহার সহজ এবং দুই ধরনের স্মার্টফোন, আইওএস এবং অ্যান্ড্রয়েডে সমানভাবে কার্যকর। ব্যবহারকারীরা অ্যাপ স্টোর অথবা গুগল প্লে স্টোর থেকে এই অ্যাপটি ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারেন। চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে প্রেসক্রিপশন পড়া একেবারে সরল একটি প্রক্রিয়া।
প্রথমে, ব্যবহারকারীকে চ্যাটজিপিটি অ্যাপের ক্যামেরা আইকনে ক্লিক করে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের একটি ছবি তুলতে হবে। পুরোনো ছবি থাকলেও তা আপলোড করা যাবে। তবে, একটি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে—ছবিটি যেন হাই রেজলিউশন হয়, কারণ অস্পষ্ট ছবি থেকে প্রেসক্রিপশনের সঠিক তথ্য বের করা কঠিন হতে পারে। এরপর ব্যবহারকারীকে চ্যাটজিপিটিকে নির্দেশ দিতে হবে, যেমন “রিড দিস” বা সমতুল্য অন্য কোনো প্রম্পট। এরপর চ্যাটজিপিটি সেই প্রেসক্রিপশনটি বিশ্লেষণ করে ওষুধের নাম, ডোজ, এবং চিকিৎসকের অন্যান্য নির্দেশনা পড়ে শোনাবে।
এখানেই শেষ নয়, চ্যাটজিপিটি প্রেসক্রিপশন সম্পর্কিত আরও জটিল প্রশ্নেরও উত্তর দিতে সক্ষম। আপনি যদি জানতে চান, কতদিন ওষুধটি খেতে হবে বা এর কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে কি না, চ্যাটজিপিটি আপনাকে সেই তথ্যও সরবরাহ করবে। এ ছাড়া, কোন ডায়েট মেনে চলতে হবে বা চিকিৎসকের অন্যান্য পরামর্শ সম্পর্কে যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে, তাতেও এটি আপনাকে সাহায্য করতে পারবে। এটি শুধু প্রেসক্রিপশনের পাঠোদ্ধারেই থেমে থাকে না, বরং চিকিৎসা সংক্রান্ত কিছু তথ্যও সরবরাহ করতে পারে।
চ্যাটজিপিটির সুবিধা এবং সীমাবদ্ধতা
চ্যাটজিপিটির এই ফিচার নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উপকারী, বিশেষ করে তাদের জন্য, যারা ডাক্তারের লেখা পড়তে হিমশিম খায়। এর মাধ্যমে প্রেসক্রিপশন পড়তে সক্ষম হওয়ার ফলে চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য এবং নির্দেশনা বুঝতে সহজ হবে এবং রোগীরা দ্রুত সঠিক ওষুধ গ্রহণ করতে পারবে। সময়মতো ও সঠিক ওষুধ গ্রহণ রোগের উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এ ধরনের প্রযুক্তি সেই প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করতে সহায়ক হতে পারে।
তবে, এআই প্রযুক্তি হিসেবে চ্যাটজিপিটির একটি বড় সীমাবদ্ধতা আছে। এটি একটি মেশিন-চালিত টুল, এবং সবসময় সঠিক তথ্য সরবরাহ করতে সক্ষম নাও হতে পারে। কোনো প্রেসক্রিপশন পড়ার সময় সেটি ভুলও হতে পারে। চ্যাটজিপিটি কোনো পেশাদার চিকিৎসা পরামর্শদাতা নয়, তাই এর মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য অবশ্যই অন্য কোনো উৎস থেকে যাচাই করা উচিত। চ্যাটজিপিটির পাঠোদ্ধারের ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর না করে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ওষুধ গ্রহণ করাই নিরাপদ।
ভবিষ্যতে চ্যাটজিপিটির ব্যবহার
চ্যাটজিপিটির এই নতুন ফিচার এআই-এর ব্যবহার আরও জনপ্রিয় করে তুলবে এবং দৈনন্দিন জীবনকে আরও সহজ করবে। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়াও ভবিষ্যতে আরও নানা ধরনের জটিল কাগজপত্র, আইনি দলিল বা অন্য তথ্যপত্র পড়তে ও বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হবে এই চ্যাটবট। এতে করে আরও বেশি মানুষ সহজে ও দ্রুত প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারবে।
চ্যাটজিপিটি যে কেবল প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত তাই নয়, এটি দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজে মানুষের সঙ্গী হয়ে উঠছে। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারই আমাদের জীবনের উন্নতি ঘটাতে পারে, এবং চ্যাটজিপিটি সেই উন্নতির দিকেই একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।