সাতক্ষীরার আশাশুনিতে ইউনিয়ন বিএনপির ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১৫-২০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে সম্মেলন বন্ধ ঘোষণা করে। সংঘর্ষের পর এলাকায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি থমথমে থাকলেও চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় বুধহাটা ইউনিয়নের বেউলা সাইক্লোন শেল্টার মাঠে বিএনপির ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন শুরু হয়।
সম্মেলনে কমিটি গঠনের লক্ষ্যে উপজেলা বিএনপির নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেছিল। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আল আবদুর রব সভাপতি ও মেম্বার আব্দুর রব সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে খোরশেদ আলম ও মামুন হোসেন থাকায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। কিন্তু বেলা ১১টা ৩০ মিনিটের দিকে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি থেকে বাদ পড়া এক পক্ষ শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হলে দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়।
একপর্যায়ে তারা লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আরাফাত হোসেন পলাশ, যুবদলের সাবেক সহসভাপতি বকুল, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শফি, কল্লোল, দীপু, আশিক, শফিকুল ও আসাফুর এবং অপরপক্ষের উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল আওয়াল ছোট, যুবদল কৃষিবিষয়ক সম্পাদক রমজান, যুবদল কর্মী আজমিনুরসহ কমপক্ষে ১৫-২০ জন আহত হন।
সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কৃষ্ণা রায়, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাশেদ হোসাইন অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। সম্মেলনস্থল থেকে সবাইকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুরো এলাকা দখলে নেয়।
সম্মেলন আয়োজনকারী পক্ষের নেতা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মশিউল হুদা তুহিন, যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল আলিম, রবিউল আওয়াল ছোট, যুবদলের সদস্য সচিব আবু জাহিদ সোহাগ বলেন, আমরা পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ১০টা থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ করছিলাম। প্রতিপক্ষ পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে সম্মেলন পণ্ড করে দেয়। আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে তারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়। পরে ভোট পুনরায় শুরু হলেও প্রশাসনের নির্দেশে পুলিশ ও সেনাবাহিনী আমাদের সরিয়ে দেয় এবং সম্মেলন বন্ধ করে দেয়।
অপর পক্ষ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসিফুর রহমান তুহিন, সদস্য সচিব জাকির হোসেন বাচ্চু, যুগ্ম আহ্বায়ক খায়রুল আহসান বলেন, ১৬ জানুয়ারি খুলনা বিভাগীয় টিম সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই আমাদের বাদ দিয়ে আওয়ামী সমর্থিত ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজও একই কায়দায় সম্মেলন করা হলে আমাদের নেতাকর্মীরা সেখানে গেলে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। আমরা এ ঘটনার তদন্ত ও সংশ্লিষ্টদের শাস্তি চাই এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের সম্মেলন প্রতিহত করব।
আশাশুনি উপজেলা বিএনপির সভাপতি হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, আজ বেউলা সাইক্লোন শেল্টার মাঠে বুধহাটা ইউনিয়ন বিএনপির ত্রিবার্ষিক সম্মেলন ছিল। সম্মেলনে প্রতিনিধি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু করা হয়। এর মধ্যে বিএনপির অন্য একটি অংশের নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে সম্মেলনস্থলে আসেন। এরপর দুই পক্ষেv পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। হামলায় নেতৃত্ব দেন আসিফুর রহমান ও জাকির হোসেন। তাদের হামলায় আটজন আহত হন।
অপর পক্ষের নেতা আসিকুর রহমান জানান, তারা বেউলা সাইক্লোন শেল্টার মাঠে আগেই একটি সমাবেশ আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তারা আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে গেলে প্রতিপক্ষ তাদের ওপর লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে হামলা করে। এতে তাদের সাতজন আহত হন। আশাশুনি উপজেলা বিএনপির সভাপতি হেদায়েতুল ইসলাম ও সদস্যসচিব মশিউল হুদা মনগড়া একতরফা কমিটি করার জন্য অধিকাংশ ত্যাগী নেতাকে বাদ রেখে সম্মেলন করছিলেন বলে দাবি করেন তিনি।
আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কৃষ্ণা রায় বলেন, দলীয় বিষয়ে প্রশাসনের কোনো হেডেক নেই। আমাদের বিষয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। কাউকে সহযোগিতা নয়, যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক থাকে, কে কী করছে এ নিয়ে আমাদের কোনো হেডেক নেই।