জিএম ফাতিউল হাফিজ বাবু : জামালপুরের বকশীগঞ্জে দশানী নদীতে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দুটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। একারণে ওই বাঁধ দুটির উজানে ৩ টি ইউনিয়নে শত শত বিঘা জমির পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। একই সঙ্গে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে দশানী নদী।
দ্রুত বাঁধ অপসারণ করা না হলে হাজার হাজার জমির ফসল বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে উজানের ৩ টি ইউনিয়নের ২০ টি গ্রামে।
দশানী নদীর অস্তিত্ব রক্ষা, ফসলি জমির ধান রক্ষা, জলাবদ্ধতা রোধে বাঁধ দুটি কেটে দিয়ে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
বাঁধের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশ^াস দিয়েছেন বকশীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়ন ও বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর, সাধুরপাড়া ইউনিয়নের বুক চিরে বয়ে গেছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা দশানী নদী। বর্ষাকাল ও বন্যা হলেই নদী ভাঙন শুরু হয় এই তিন ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকায়। নদী ভাঙনে ইতোমধ্যে কয়েকশত বসত বাড়ি ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এই এলাকার মানুষের জীবিকার জায়গা ক্ষীণ হয়ে এসেছে। বার বার নদী ভাঙনের কবলে পড়ে নি:স্ব হয়েছেন অনেক পরিবার। অনেকেই ভিটে মাটি হারিয়ে রাজধানী ঢাকায় রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কিন্তু নেওয়া হয়নি ভাঙন রোধে ব্যবস্থা। তাই
নদী ভাঙন রোধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের মাদারেরচর ও খাপড়া পাড়া এবং মেরুরচর ইউনিয়নের ঘুঘরাকান্দি, মুন্দি পাড়া, মুন্সি পাড়া, উজান কলকিহারা, কলকিহারা এলাকার মানুষ নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ করে গত ১০ দিন আগে খাপড়া পাড়া দশানী নদীতে আড়াআড়িভাবে একটি বাঁধ নির্মাণ করেন। এই বাঁধ দেখে বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চর আইরমারী গ্রামে দশানীতে পাল্টা আরেকটি বাঁধ নির্মাণ করছেন ওই এলাকার মানুষ।
পাল্টাপাল্টি দুটি বাঁধ নির্মাণের ফলে নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে উজানের পানি ভাটিতে আসার পরিবর্তে উল্টো ভাটির পানি উজানের দিকে বয়ে যাচ্ছে। এতে উজানে দেখা দিয়েছে কৃত্তিম বন্যা। একারণে সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চর কামালের বার্ত্তী, গাজীর পাড়া, কুতুবের চর, বাঙ্গাল পাড়া, শেখ পাড়া, চর গাজীর পাড়া, আচ্চা কান্দি, নিলের চর, বগারচর ইউনিয়নের আলীর পাড়া, গোপাল পুর ও বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব দপর পাড়া, কলাকান্দা গ্রামের খাল ও বিলের তীরবর্তী জমির পাকা ধান তলিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকশত জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এমতাবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষক পানির নিচ থেকে ডুবে ডুবে ধান কেটে নিচ্ছেন। আর মাত্র ১৫ থেকে ২০ দিন পরেই কৃষকরা তাদের কষ্টার্জিত ফসল ঘরে তুলত। কিন্তু অপরিকল্পিত বাঁধ দেওয়ায় কৃষকের স্বপ্ন এখন পানির নিচে।
পাল্টাপাল্টি বাঁধ নির্মাণের ফলে উজানের প্রায় ২০টি গ্রামের মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা দ্রুত বাঁধ দুটি অপসারণ করে নদীর পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার দাবি জানিয়েছেন প্রশাসনের কাছে।
সাধুরপাড়া ইউনিয়নের গাজীর পাড়া গ্রামের সাবেক শিক্ষক গোলাম কিবরিয়া মনু জানান,
বাঁধ দুটি কেটে দেওয়া না হলে এক দিকে যেন খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে অন্যদিকে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। তাই সর্বশক্তি প্রয়োগ করে হলেও অবৈধ বাঁধ দুটি অপসারণ করতে হবে।
একই ইউনিয়নের আচ্চাকান্দি গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য গাজী সহিজল হক জানান, ভাটিতে দুটি বাঁধ নির্মাণর কারণে উজানে কৃত্তিম বন্যা দেখা দিয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। কৃষকের ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। নদীর পতিপথ পরিবর্তন ও নতুন করে নদী বের হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাই যেকোন মূল্যে এই বাঁধ দুটি খুলে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাধুরপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম জানান, যারা অবৈধভাবে বাঁধ নির্মাণ করেছেন জনস্বার্থে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। নদীর পানি বাঁধা দেওয়ার এখতিয়ার কারও নাই। তিনি জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বকশীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আমিনুল ইসলাম জানান, বাঁধ নির্মাণের ফলে দীর্ঘ মেয়াদী সমস্যায় পড়তে পারে উজানের কৃষকরা। ফলে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রোপা আমণ চাষ ব্যাহত হবে। তাই এব্যাপারে জরুরী পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ এই কর্মকর্তার।
এব্যাপারে বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মাসুদ রানা জানান, দশানী নদীতে অবৈধভাবে দুটি স্থানে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে । পানি প্রবাহ বন্ধ করা ফৌজদারী অপরাধ। যারা এই বাঁধের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং খুব শিগগিরই বাঁধ দুটি অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বকশীগঞ্জে দশানী নদীতে অবৈধ বাঁধ নির্মাণ, উজানে তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকের ধান!
