লন্ডনে উন্নত চিকিৎসা শেষে প্রায় চার মাস পর সোমবার (৫ মে) স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ১০ মিনিট) ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। কাতারের আমিরের দেওয়া ‘এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে’ রওনা হবেন তিনি। মঙ্গলবার (৬ মে) বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
বিমানবন্দর থেকে সরাসরি গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় উঠবেন তিনি।ঢাকায় খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার কথা জেনে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি রাজকীয় বহরের বিশেষ বিমান দিয়েছিলেন। ওই বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে গত ৮ জানুয়ারি লন্ডনে যান খালেদ জিয়া। সেই বিশেষ বিমানেই আবার লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়া আগামীকাল (মঙ্গলবার) কাতার রয়েল অ্যাম্বুলেন্সের এয়ার ক্রাফটে সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকায় পৌঁছাবেন। আশা করছি যে, সময়মতোই উনি ঢাকায় পৌঁছাবেন।

দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি অনুরোধ রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দলের পক্ষে থেকে একটা আবেদন যে, কালকে এসএসসি পরীক্ষা আছে, যেহেতু ঢাকা বিমান বন্দর থেকে কাকলী পথ দিয়ে ম্যাডাম গুলশানের বাসায় যাবেন। সবাইকে অনুরোধ করতে চাই, রাস্তার ওপরে যেন কেউ না দাঁড়ায়। যারা অভ্যর্থনা জানাবেন তারা ফুটপাতে দাঁড়িয়ে যেন ম্যাডামকে অভ্যর্থনা জানান। দলের নেতা-কর্মীরা জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন এটা আমরা নির্দেশনা দিয়েছি।
কাউকে রাস্তায় দাঁড়াতে না দেওয়ার আহ্বান
মির্জা ফখরুল বলেন, পুলিশ কর্তৃপক্ষকে বলতে চাই, তারা যেন রাস্তায় কাউকে দাঁড়াতে না দেন। যারা ট্রাফিকের সঙ্গে জড়িত আছেন তাদের প্রতি এই আহ্বান থাকবে।
‘পরীক্ষার্থীদের অসুবিধা যাতে না হয়’
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে আবেদন রাখতে চাই, কেউ যেন রাস্তায় না দাঁড়ান, ট্রাফিক বিঘ্নিত না করেন, পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র যেতে যেন বাধায় না পড়ে সেই ব্যাপারে সাইকে নজর রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সবাই মিলে যথাসাধ্য চেষ্টা করব যাতে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র যেতে কোনো অসুবিধা না হয়।
‘প্রস্তুত ফিরোজা’
খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষ্যে গুলশানের ৮০ নং সড়কের তার বাসভবন ‘ফিরোজা’র সামনে পালাক্রমে পাহারা দিচ্ছেন নিরাপত্তা বাহিনী ও চেয়ারপার্সনের সিকিউরিটি ফোর্সের (সিএসএফ) সদস্যরা।
বাসার ভেতরের সব কক্ষগুলোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজও শেষ। সামনের সবুজ আঙিনায় ফুল গাছের টব দিয়ে সাজানো হয়েছে।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ম্যাডামের বাসা কমপ্লিটলি রেডি। বিদ্যুৎ, গ্যাস, ওয়াসা, বাসার আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সাজসজ্জার কোনো কিছুই বাদ নেই। ম্যাডামের স্বজনরা সব কিছু তদারকি করেছেন। এখন আমরা সবাই তার আসার অপেক্ষায় আছি।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে আসছেন যারা
বিএনপির চেয়ারপার্সনের সঙ্গে লন্ডন থেকে তার দুই পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে আসছেন।
লন্ডনে অবস্থানরত তার (খালেদা জিয়া) ব্যক্তি চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, স্থানীয় সময় বিকেলে হিথরো বিমান বন্দর থেকে কাতারের আমিরের দেওয়া রাজকীয় বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে রওনা হবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। লন্ডন থেকে ঢাকার যাত্রা পথে দোহায় যাত্রাবিরতি আছে। শিডিউল অনুযায়ী লন্ডন থেকে যাত্রা করে দোহা হামাদ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছাবেন স্থানীয় সময় রাত আড়াইটায়।

খালেদা জিয়া এই মুহূর্তে কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ তিনি আগের চেয়ে ভালো আছেন। আমরা আশা করছি, যথা সময়েই ম্যাডাম হিথরো বিমান বন্দরে গিয়ে বিমানে উঠতে পারবেন। দেশবাসী দোয়া করবেন ম্যাডাম যেন ভালোভাবে দেশে পৌঁছাতে পারেন।
বড় ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজে ড্রাইভ করে খালেদা জিয়াকে নিয়ে হিথরো বিমান বন্দরে আসবেন বলেও জানান ডা. জাহিদ।
গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যান বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। লন্ডন ক্লিনিকে টানা ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৫ জানুয়ারি থেকে তার ছেলে তারেক রহমানের বাসায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন আছেন।