শরীয়তপুরের নড়িয়ার নওপাড়া ইউনিয়নে বিএনপির নতুন কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার উপস্থিতি ঘিরে দলে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, এটি দলের আদর্শ ও আন্দোলনের প্রতি অবমাননা।শুক্রবার (৯ এপ্রিল) বিকেলে ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একাধিক পদধারী নেতার অংশগ্রহণ দলের ভিতরে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ফয়জুল হাসান বাদল মুন্সী, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মনি দেওয়ান, প্রচার সম্পাদক বোরহান তফাদার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তাপা তফাদার, সহ-সভাপতি মোস্তফা হাওলাদার, জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ও ইউপি সদস্য নজু ছৈয়ালসহ আরও অনেকে। অনুষ্ঠানে তারা বিএনপির নেতাদের পাশেই মঞ্চে বসে ছিলেন।উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা বিএনপির সভাপতি সামসুল আলম দাদন মুন্সী, যিনি মূলত এই অনুষ্ঠানের নেতৃত্ব দেন। তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের এই উপস্থিতি বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীর কাছে অস্বাভাবিক ও অগ্রহণযোগ্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে।স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জুলাই-আগস্টের গণ-আন্দোলনে ছাত্র-জনতার উপর বর্বর হামলা চালানো আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে দলীয় কার্যালয় উদ্বোধন মানে আন্দোলনের আদর্শ ও সংগ্রামের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।তারা আরও বলেন, যারা এক সময় বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-পীড়নে অংশ নিয়েছে, তাদের এখন অতিথি হিসেবে স্বাগত জানানো দলের জন্য লজ্জাজনক। এ ঘটনায় উপজেলা বিএনপির সভাপতির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কয়েকজন বিএনপি নেতা দাবি করেছেন, দলীয় নির্দেশনার পরিপন্থী এমন কর্মকাণ্ডের জন্য দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। অনেকেই মনে করছেন, এই ঘটনা বিএনপির চেয়াপার্সন ও তারেক রহমানের আদর্শের সঙ্গেও সঙ্ঘাতপূর্ণ। ছাত্র হত্যা মামলার আসামী নওপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন মুন্সী, চরআত্রা ই্উনিয়নের সাবেক আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যানকে সাথে নিয়ে সামসুল আলম দাদন মুন্সী মানববন্ধন করেছেন। যাদের তিনি পাশে রাখেন তারা সবাই আওয়ামীলীগের লোক। জাকির হোসেন মুন্সী ও ফয়জুল হাসান বাদল মুন্সীর বিরুদ্ধে মব জাস্টিসের সাথে যুক্ত থাকায় নড়িয়া থানায় মামলা চলমান। অভিযোগ উঠেছে, দাদন মুন্সী ইশারায় ওয়াপদা বাজার হাটটি মূলফৎগঞ্জে সরানো হয়। এমনকি হাট মিলিয়ে দোকানের ভিটি বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। সেই টাকা আওয়ামীলীগের নেতাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে খান বলেও অভিযোগ রয়েছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মাদারীপুরের পতিতালয়ের দালাল নামে পরিচিত এই বিএনপি নেতা শুরু করেন সুরেশ্বর মাছের আড়ৎ খোলা বন্ধের বাণিজ্য।রাজনৈতিক পরিচয়ে অপকর্মের সাম্রাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে দাদন মুন্সী। গ্রাম্য সালিশে বসলে ঘুষ নেন দুপক্ষ থেকে।যে পক্ষ ঘুষ বেশি দেন তার পক্ষেই রায় দেন মুন্সী বাড়ির এই নেতা। দীর্ঘ দিনের ত্যাগী তৃণমূল বিএনপি নেতাদেরকে রেখেছেন তিনি কোনঠাসা করে। কাউকেই মাথা নাড়িয়ে উঠতে দেন না তিনি। বহুবছর কমিটিতে থাকা সদস্যদের বাদ দিয়ে বিত্তশালীসহ আ’লীগের সমর্থকদের কমিটির শীর্ষ পর্যায়ে রেখে আশ্রয় দেওয়ার ও অভিযোগ উঠেছে বিএনপির উপজেলা পর্যায়ের এই নেতার বিরুদ্ধে।পদ্মা নদীতে বিশাল আকারের ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে দেদারসে তোলা হচ্ছে বালু। প্রতিদিন প্রায় অর্ধশতাধিক বালুর জাহাজ লোড করে বিক্রিও করেন বিএনপির এই নেতা।পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক নড়িয়া থানার এক পুলিশের কর্মকর্তা জানান, ‘পুলিশ সবই জানে। কিন্তু ওসি স্যার তো ম্যানেজড। গোড়ায় টাকা দিলে সব অবৈধই বৈধ। আর দাদন মুন্সী যেমনে বলে থানার সবাই তো তেমনেই চলে।’এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সামসুল আলম দাদন মুন্সী বলেন, আমি কোনো আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে নিয়ে কার্যালয় উদ্বোধন করিনি। কেউ ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হতে পারে। সেটি আমার নিয়ন্ত্রণে নয়।জানতে চাইলে শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান কিরণ বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীকে নিয়ে এমন অনুষ্ঠান করা যাবে না। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখবো এবং প্রয়োজনে দলের মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনা করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপির কার্যালয় উদ্বোধনে আ.লীগ নেতারা, সমালোচনার ঝড়
