জামালপুরে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদ্যাপিত

নিজস্ব সংবাদদাতা ; প্লাস্টিক দুষণ প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসনের জোরদার পদক্ষেপের গ্রহনের আহ্বান জানিয়ে ০১ জুন রবিবার জামালপুর শহরের বকুলতলা মোড়ে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ০৫ জুন বিশ^ পরিবেশ দিবস উদ্যাপনের অংশ হিসেবে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) জামালপুর উক্ত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। ‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সনাক জামালপুরের সভাপতি শামীমা খান। তিনি বলেন, প্রতিবছর বন্যা হওয়ার কারনে জামালপুর পরিবেশ বিপর্যয়ের সবচেয়ে ঝুঁিকপূর্ণ এলাকা। প্লাস্টিকের দূষণ এই ঝুঁকিকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্লাস্টিক দুষণ শুধুমাত্র নদীর পানি ধারণ ক্ষমতাকে বিনষ্ট করছে না, ভূমিতে প্লাস্টিকের উপস্থিতি বাস্তুতন্ত্র ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দাঁিড়য়েছে। ফলে জামালপুরকে বাসযোগ্য করতে হলে এখানকার প্রত্যেক নাগরিককেই সচেতন হতে হবে। এই সময় তিনি প্লাস্টিক দূষণের সমাধান হিসেবে আইনের কঠোর প্রয়োগ করার নিশ্চিত করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে শহর ও নগরে প্লাস্টিক বর্জ্যরে অব্যবস্থাপনা পরিবেশ সুরক্ষায় একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে একক ব্যবহার পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন এবং বিপণন নিষিদ্ধ হলেও তা নিশ্চিতে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক আইন প্রয়োগে ঘাটতিসহ বিবিধ অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে পলিথিন ব্যবহার অব্যাহত রয়েছে। পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের পাশাপাশি এর বিকল্প ব্যবহারও বাড়াতে হবে। যত্র-তত্র প্লাস্টিকের ব্যবহার্য উপকরণ না ফেলে জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তা উপযুক্ত স্থানে ফেলতে পারলে প্লাস্টিক দূষণ কিছুটা কমবে বলে বক্তারা মত প্রকাশ করেন। বাংলাদেশকে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়াও আলোচনায় বক্তারা বৃক্ষরোপনের উপর গুরুত্বারোপ করেন। বক্তারা বলেন, বৃক্ষরোপন শুধুমাত্র পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাই করবে না বরং এটি ভবিষ্যতের জন্য সহায়ক শক্তি হিসেবে দাড়াতে পারে। এর আগে স্বাগত সনাক জামালপুরের পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির আহ্বায়ক মনোয়ারা খানম বিশ^ পরিবেশ দিবসের প্রেক্ষাপট এবং মানববন্ধনের উদ্দেশ্য তুলে ধরেন। মানববন্ধনে বক্তব্য প্রদান করেন জামালাপুর পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম, পরিবেশ বাচাঁও, জামালপুরের সাধারণ সম্পাদক এড. ইউসুফ আলী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন জামালপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক, সুশাসনের জন্য নাগরিক, সূর্যতোরণ সমাজ সেবা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক খোরশেদ আলম, সনাক সদস্য অজয় কুমার পাল, রফিকুজ্জামান মল্লিক, অধ্যাপক কায়েদ-উয-জামান, মুহাম্মদ সাজ্জাত হুসেন, ইয়েস দলনেতা সাকিফ ভূইয়াসহ প্রমূখ।
বিশ^ পরিবেশ দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে টিআইবি সংশ্লিষ্ট অংশীজনের বিবেচনার জন্য ১৪ দফা সুপারিশসমূহের প্রস্তাবনা সম্বলিত ধারণপত্র প্রকাশ করা হয়, যার মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য (১) ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে; (২) “ন্যাশনাল থ্রিআর স্ট্রাটেজি ফর ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট” কৌশলপত্রটি হালনাগাদ ও সংশোধনসহ পরিবেশ সংক্রান্ত বৈশি^ক প্রতিশ্রুতির আলোকে একটি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে; (৩) প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ, পৃথকীকরণ, পুনঃপ্রক্রিয়াজতকরণের ব্যবস্থাসহ একটি আধুনিক ও কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে পরিবেশ অধিদপ্তরও পৌরসভাগুলোর কারিগরি ও আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; (৪) প্লাস্টিক শিল্পের জন্য আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি ও অন্যান্য প্রণোদনা হ্রাস করে পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণকে উৎসাহিত করতে হবে; (৫) অপ্রাতিষ্ঠানিক প্লাস্টিক পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকারীদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে অন্তর্ভূক্ত করার লক্ষ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে; (৬) যত্রতত্র প্লাস্টিক ফেলা বন্ধ এবং পরিবেশ দূষণ রোধে সাধারণ জনগণের মধ্যে প্লাস্টিকের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে; (৭) প্লাস্টিক দূষণ ও পরিবেশের ক্ষতিসহ এখাত-সংশ্লিষ্ট অনিয়মের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় আনতে হবে; ইত্যাদি।
মানববন্ধনের পাশাপাশি উক্ত ধারণাপত্র সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়। মানববন্ধন ও এসব কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, পরিবেশ কর্মী, গণমাধ্যম কর্মী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিপুল সংখ্যক নারী ও পুরুষ।