মোহাম্মদ আলী : “আগে সম্ভ্রান্ত, রুচিশীল, শিক্ষিত মানুষের বাসা বাড়িতে ও স্কুল কলেজে বাজনার চর্চা হতো। গ্রামগঞ্জে, নাটক, জারি গান, পালাগান অনুষ্ঠিত হতো। এখন এসবের চর্চা কমে গেছে। তাই, বাদ্যযন্ত্রে ব্যবসা এখন ভালো না, মন্দা। আর কিছুদিন পর হয়তো এ ব্যবসা আর থাকবে না”!
কেমন যাচ্ছে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবসা? জানতে চাইলে জামালপুর শহরের একজন বাদ্যযন্ত্র ব্যবসায়ী ও কারিগর, মন্টু দাস ( ৫৫) উপরের কথাগুলো বলেছেন। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে আরও বলেন, বাদ্যযন্ত্র ব্যবসার চাইতে এখন নাপিতের ব্যবসা ভালো। অনেক কারিগর এখন বাদ্যযন্ত্রের কাজ ছেড়ে নাপিতের কাজ করছে।
জেলা শহরের বজ্রাপুর রোডস্থ বাদ্যযন্ত্র ব্যবসায়ী মন্টু দাস প্রায় ২৫ বছর যাবত জামালপুরে এসে ব্যবসা করছেন। তার পৈত্রিক নিবাস টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। বাবা রাজেন্দ্রনাথ দাস ছিলেন বাদ্যযন্ত্রের কারিগর। তার কাছ থেকেই বাদ্যযন্ত্র তৈরির হাতেখড়ি। তারা ৩ভাই -ই এ পেশার সাথে জড়িত ছিলেন। বড় দুই গবিন্দ ও জয়বিন্দ আজ আর নেই! শুধু বেঁচে আছেন তিনিই । ৫০ বছর বাদ্যযন্ত্র তৈরি , মেরামত ও ব্যবসার সাথে জড়িত থেকে তেমন কিছুই কামাতে পারেননি মন্টু। খেয়ে পড়ে ৩টি মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এটুকুই জীবনের অর্জন। আজও একটা ঘর করতে পারেননি। থাকেন ভাড়া বাড়িতে। সামনের দিনগুলো নিয়ে দারুণ হতাশ তিনি!
জনৈক গানের শিক্ষক বলেন, গান ও বাজনা। দুইটি জিনিস অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। একে অপরের পরিপূরক। বাজনা ছাড়া গান হয় না। একটি গানকে শ্রুতিমধুর ও প্রাণবন্ত করে তুলতে বাজনার বিকল্প নেই। আর এ বাজনার সাথে জড়িত ছিল একদল যন্ত্রী বা যন্ত্রশিল্পী। সে যন্ত্রীরা গানের সাথে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে জীবন নির্বাহ করতেন। কিন্তু, প্রযুক্তি এসে বাদ্যযন্ত্রের সাথে যন্ত্রশিল্পীদেরকেও গ্রাস করেছে। এখন গান গাইতে আর বাদ্যযন্ত্র ও যন্ত্রশিল্পী লাগে না! প্রযুক্তিই এখন যন্ত্র বাজায়! যার কারণে গানের বাজারে এখন করুণ পরিণতি!
কমে গেছে গান বাজনা, তাই বাদ্যযন্ত্রের ব্যবসা এখন মন্দা
