গাইবান্ধার সাঘাটা থানায় ঢুকে সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মহসিন আলীকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় পুকুরে ডুবে মারা যাওয়া যুবক সিজু মিয়ার মৃত্যু ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গাইবান্ধা। নিহতের পরিবারের দাবি, সিজুর মৃত্যু স্বাভাবিক নয়, বরং এটি পরিকল্পিত ‘হত্যা’।
শনিবার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যায় গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর গাইবান্ধা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে সিজুর স্বজন ও স্থানীয়রা সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন। এতে গাইবান্ধা জেলা ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন।
বিক্ষোভে বক্তারা সাঘাটা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাদশা আলমকে অভিযুক্ত করে অবিলম্বে তাকে প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারের দাবি জানান। তারা বলেন, সিজুর মৃত্যু পানিতে ডুবে নয়, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তাকে ঠান্ডা মাথায় মেরে ফেলা হয়েছে। সিজু সুস্থ-সবল একজন স্বাভাবিক যুবক।
বিকেল সাড়ে ৫টায় শুরু হওয়া মানববন্ধন দেড় ঘণ্টা চলার পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিক্ষোভে রূপ নেয়। এ সময় উত্তেজিত জনতা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে সড়ক ফাঁকা করার নির্দেশ দিলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
পরে গাইবান্ধা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) শরিফুল আলম বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে শান্ত করার চেষ্টা করেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু উপস্থিত জনতা পুলিশ সুপারের উপস্থিতি দাবি করেন। অবশেষে আন্দোলনকারীদের চাপের মুখে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার নিশাত এঞ্জেলা ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত সিজুর মা ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার জন্য তাদের কার্যালয়ে নিয়ে যান। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সিজুর মা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন।
এর আগে দুপুরে বাদ জোহর সিজুর নিজ গ্রাম গিদারীতে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার আগে গাইবান্ধা জেলা জামায়াতের আমির আব্দুল করিম বক্তব্যে দাবি করেন, সিজু ইসলামী ছাত্রশিবিরের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, সিজু অন্যায়ের প্রতিবাদ করতো বলেই তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত বিচার দাবি করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার সকালে সাঘাটা থানার পাশে সাঘাটা হাই স্কুলের পুকুর থেকে সিজুর মরদেহ উদ্ধার করে রংপুর থেকে আসা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে মোবাইল হারানোর বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে সিজু থানায় গিয়েছিলেন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় জিডি হয়নি। কিন্তু প্রায় এক ঘণ্টা পর ছুরি হাতে থানায় ফিরে এসে দায়িত্বরত কনস্টেবল সেরাজুলের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন সিজু। এ সময় তিনি ছুরি দিয়ে এএসআই মহসিন আলীকে মাথা ও হাতে আঘাত করেন। এরপর পালিয়ে থানার পেছনে পাইলট স্কুলের পুকুরে ঝাঁপ দেন। রাতের অন্ধকারে উদ্ধার সম্ভব না হওয়ায় পরদিন সকালে ডুবুরি দল মরদেহ উদ্ধার করে।