জুলাই জাতীয় সনদের খসড়ার ওপর নিজের মতামত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে জমা দিয়েছে সংলাপের অংশ নেওয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) জামায়াতে ইসলামী, খেলাফতে মজলিস, এলডিপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) এবং বাসদ-মার্কসবাদী তাদের মতামত জমা দিয়েছে। এর আগে বুধবার বিএনপি, এবি পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, এনডিএম, জাতীয় গণফ্রন্ট ও আমজনতার দল মতামত জমা দেয়।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা পবন চৌধুরী এ তথ্য জানান। কমিশন থেকে পাঠানো জুলাই সনদে পটভূমি, ৮৪টি প্রস্তাব এবং আটটি অঙ্গীকারনামা রয়েছে।
সনদের আট নম্বর অঙ্গীকারনামায় কালক্ষেপণ না করে নির্বাচনের আগে বাস্তবায়নযোগ্য বলে বিবেচিত সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয়েছে। তবে, কোন প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নযোগ্য তা সুনির্দিষ্ট করা হয়নি খসড়ায়।
জানা গেছে, সংবিধানের চেয়েও জুলাই সনদকে প্রধান্য এবং আদালতে প্রশ্ন না তোলার বিষয়ে একমত জামায়াত। একইসঙ্গে সনদে দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলো সুনির্দিষ্ট করতে মত দিয়েছে জামায়াত।
জামায়াত সূত্র বলছে, জুলাই সনদের সব বিধান, নীতি ও সিদ্ধান্ত সংবিধানে যুক্ত করার বিষয়ে একমত জামায়াত। একই সঙ্গে বিদ্যমান সংবিধান বা অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর কিছু থাকলে সেই ক্ষেত্রে এই সনদের বিধান/প্রস্তাব/সুপারিশ প্রাধান্যের বিষয়েও দলটি একমত। সনদের চূড়ান্ত মীমাংসার এখতিয়ার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ওপর ন্যস্ত থাকার পাশাপাশি আদালতে প্রশ্ন না তোলার বিষয়ে জামায়াতের সমর্থন রয়েছে।
জামায়াতে পক্ষ থেকে সেগুলো সুনির্দিষ্ট করতে মতামত দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জুলাই সনদের আইনিভিত্তি দিতেও বলেছে দলটি।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ খসড়ায় একাধিক ‘বিরোধপূর্ণ বিষয়’ ও ‘অসামঞ্জস্য’ চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা অঙ্গীকার অংশের সঙ্গে একমত। তবে আমরা সুপারিশ করেছি যে কমিশন যেন তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কার বিষয়গুলো চিহ্নিত করে এবং অঙ্গীকারনামায় একটি সময়সীমা উল্লেখ করে।’
বিস্তারিত না জানালেও খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আব্দুল কাদের জানান, তাদের দল জাতীয় সনদের সব ধারার বাস্তবায়ন আইনি ভিত্তিতে করার ওপর জোর সুপারিশ করেছে।
সংবিধান সংক্রান্ত সংস্কার প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে আবদুল কাদের বলেন, আমরা সংবিধান সংস্কারের জন্য অধ্যাদেশ জারির সুপারিশ করেছি। আমাদের দল গণভোটের বিরোধী, কারণ এ পদ্ধতি ‘সময়সাপেক্ষ’।
জেএসডির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে জুলাই সনদকে সংবিধানে একটি পৃথক অধ্যায় হিসেবে যুক্ত করার। অঙ্গীকারের ধারা ৪—যেখানে বলা হয়েছে যে ঘোষণাপত্র কোনো আদালতে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না—তা বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
এলডিপি তাদের মতামতে খসড়ার অঙ্গীকারনামার অংশের ধারা ৪–এর বিরোধিতা করেছে, যেখানে সংবিধানের ৭(ক), ধারা ৩ এবং অঙ্গীকার অংশের ধারা ৪ বাতিল করার প্রস্তাব করা হয়েছিল।
এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ বলেন, ‘আমরা সুপারিশ করেছি যে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিলের স্বাধীনতার ঘোষণা ৭(ক) অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকতে হবে। অঙ্গীকার অংশে জুলাই সনদের ব্যাখ্যাদাতা হিসেবে শুধুমাত্র আপিল বিভাগের উল্লেখ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘আপিল বিভাগের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়ার একটি সংজ্ঞায়িত আইনি প্রক্রিয়া আছে, যা অঙ্গীকার অংশে অনুপস্থিত। এ ছাড়া আমরা জোরালোভাবে অঙ্গীকার অংশের ধারা ৪–এর বিরোধিতা করেছি, যেখানে বলা হয়েছে জুলাই সনদকে কোনো আদালতে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না।’
রেদোয়ান বলেন, প্রস্তাব করেছে পরবর্তী সংসদ গঠনের পর দুই বছরের মধ্যে সনদ বাস্তবায়নের।
অঙ্গীকারনামার বিষয়ে বাসদ মার্কসবাদীর পক্ষ থেকে বলা হয়, কোনো প্রস্তাব বা সুপারিশের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে যদি আদালতে প্রশ্ন তোলা না গেলে সুপ্রিম কোর্ট কীভাবে ব্যাখ্যা দেবে? বিষয়টি সম্পর্কে কমিশনের ব্যাখ্যার দাবি করে বাসদ মার্কসবাদী।
জুলাই সনদ সম্পর্কে আদালতে প্রশ্ন করা যাবে না- এই প্রস্তাবকে গণতান্ত্রিক মনে করে না দলটি। আবার সব ক্ষেত্রে (সমস্ত আইন ও সংবিধান) এ সনদের অগ্রাধিকারের কথা যে ভাষায় ব্যক্ত করা হয়েছে, সেটাও খুব বিবেচনাপ্রসূত হয়নি বলে করে বাসদ মার্কসবাদী।
দলটি মনে করে, এই সনদ কার্যকর করার পথ নিয়ে আলোচনা হতে পারে, কিন্তু একে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ দলিল হিসেবে ঘোষণা করাটা ভালো উদাহরণ হয় না।