চলমান নারী বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান। কলম্বোয় অনুষ্ঠিত ম্যাচে ৮৮ রানে জয় পায় ভারত। তবে হারমানপ্রীত কৌরদের জয়ের মাঝেও তৈরি হয় বিতর্ক, যার কেন্দ্রে ছিলেন পাকিস্তানি ব্যাটার মুনিবা আলী। তাকে তৃতীয় আম্পায়ার রানআউট ঘোষণা করলেও মেনে নিতে পারেনি পাকিস্তান। এবার মুনিবার রানআউটের ব্যাখ্যা দিয়েছে ক্রিকেটের আইনপ্রণেতা সংস্থা মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি)।
ভারতের ২৪৭ রান তাড়া করতে নেমে ইনিংসের চতুর্থ ওভারের পঞ্চম বলে মুনিবাকে হারায় পাকিস্তান। তৃতীয় আম্পায়ার তাকে রানআউট আউট দেওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ জানান দলের অধিনায়ক ফাতিমা সানা। তবে এমসিসি মনে করে, ম্যাচে তৃতীয় আম্পায়ার দক্ষিণ আফ্রিকার কেরিন ক্লাস্তে মুনিবার বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্তই দিয়েছেন। অর্থাৎ রানআউটের সিদ্ধান্তকে সঠিক হিসেবে রায় দিয়েছে এমসিসি। এর ব্যাখ্যাও দিয়েছে সংস্থাটি।
ভারতের পেসার ক্রান্তি গৌরের এক ডেলিভারি মুনিবার প্যাডে লাগলে ফিল্ডাররা এলবিডব্লিউর আবেদন জানান। অন-ফিল্ড আম্পায়ার সেই আবেদন নাকচ করে দেন। এ সময় ক্রিজের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন মুনিবা। তার ব্যাটও তখন দাগের ভেতরে ছিল না। এমন মুহূর্তে ভারতীয় ফিল্ডার দীপ্তি শর্মা সরাসরি থ্রো করে ভেঙে দেন স্টাম্প। সঙ্গে সঙ্গেই আবেদন করা হয় রানআউটের।

তৃতীয় আম্পায়ার ভিডিও রিপ্লে দেখে নিশ্চিত হন, বল স্টাম্পে লাগার সময় মুনিবার ব্যাট বাতাসে ছিল, আর তিনি নিজেও ছিলেন ক্রিজের বাইরে। ফলে তৃতীয় আম্পায়ার তাকে রানআউট ঘোষণা করেন। তবে এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি পাকিস্তান দল। ডাগআউটে থাকা পাকিস্তানের অধিনায়ক ফাতিমা সানা ম্যাচের চতুর্থ আম্পায়ারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন।
একপর্যায়ে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে থাকা মুনিবাকে বাউন্ডারি লাইনের ভেতরে থাকতে বলেন ফাতিমা। বিষয়টি নিয়ে নিজেদের ওয়েবসাইটে দেওয়া ব্যাখ্যায় এমসিসি বলেছে, আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত একদম সঠিক ছিল।

অনেকেই দাবি করেছেন, মুনিবা আইনের ৩০.১.২ ধারা অনুসারে আউট ছিলেন না। কারণ কিছু সময় আগেই তিনি ক্রিজে ব্যাট রেখেছিলেন। তবে এমসিসি জানায়, এই ধারা প্রযোজ্য শুধু তখনই, যখন ব্যাটার দৌড়াতে গিয়ে বা ডাইভ দিতে গিয়ে সাময়িকভাবে ক্রিজের সঙ্গে যোগাযোগ হারান। কিন্তু মুনিবার ক্ষেত্রে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাট তুলে নিয়েছিলেন। ফলে ওই আইন এখানে প্রযোজ্য নয়।
এমসিসির ভাষ্য অনুযায়ী, ‘২০১০ সালে চালু হওয়া এই আইনটি, যেটি “বাউন্সিং ব্যাট ল” নামেও পরিচিত, তা ব্যাটারকে রক্ষা করে কেবল তখনই, যখন তারা দৌড়ানোর সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে ব্যাট মাটি থেকে ওঠে যায় বা দুই পা বাতাসে উঠে যায়। কিন্তু মুনিবার ক্ষেত্রে তা হয়নি। তিনি নিজেই ব্যাট তুলেছিলেন, ক্রিজের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন।’

এছাড়া তারা আরও স্পষ্ট করে জানায়, এলবিডব্লিউর আবেদন ‘নট আউট’ ঘোষণার পর বল তখনো খেলার মধ্যেই ছিল। বলটি তখনো পুরোপুরি উইকেটকিপারের নিয়ন্ত্রণে যায়নি। বরং দীপ্তির থ্রো বলটি খেলার মধ্যেই রাখেন। এমসিসির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এটি স্পষ্টতই রানআউট। ব্যাটার তখন রান নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন না, এবং বলটি নো বলও ছিল না। উইকেটকিপার নয়, ফিল্ডার সরাসরি থ্রো করে স্টাম্প ভেঙেছেন। সুতরাং আইন অনুযায়ী আম্পায়াররা একদম সঠিক সিদ্ধান্তই দিয়েছেন।’
ক্রিকেটের আইন অনুযায়ী- ব্যাটার আউট হবেন, যদি বল খেলার মধ্যে থাকাকালীন সময়ে তিনি ক্রিজের বাইরে অবস্থান করেন এবং কোনো ফিল্ডারের কার্যক্রমে তার উইকেট ভাঙা হয়। উল্লেখ্য, নারী বিশ্বকাপে আগামীকাল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামবে পাকিস্তান। আর আগামী বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে ভারত।