হাফিজ লিটন : আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসনে রাজনৈতিক মাঠে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। বিএনপি থেকে হাফ-ডজন নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশা করে তৃণমূলে সক্রিয় প্রচারণায় নেমেছেন। তারা নিজ নিজ এলাকায় সভা- সমাবেশ ও উঠান বৈঠকসহ সাংগঠনিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে কেন্দ্রীয় ভাবে একক প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ একক প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। এই উপজেলায় ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার মোট ভোটার সংখ্যা ২৭৯৭০৮ জন।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন সুলতান মাহমুদ বাবু, ইসলামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। তিনি ২০০১ সালে সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রিকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হয়ে উপজেলাকে দুই ভাগ করে উভয় অঞ্চলেই অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেন। যা এলাকায় সাধারণ মানুষের কাছে আলোচিত, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে তাঁর জনপ্রিয়তা এখনো অটুট। উপজেলার পূর্ব ৪ ইউনিয়নকে পূর্বাঞ্চলীয় ঘোষণা দিয়ে রাস্তা-ঘাট, সেতু, ব্রিজ, কালভার্ট, মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ ও পল্লী বিদ্যুৎসহ উপজেলায় ব্যাপক কাজ করেছেন। রাক্ষসী যমুনা নদী ভাঙ্গন রোধকল্পে পার্থশী ইউনিয়নের শশারিয়াবাড়ী খান পাড়া হইতে নোয়ারপাড়া পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করেন যা নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত বহু পরিবারকে রক্ষা করে। গত সতের বছর আওয়ামী লীগ সরকারের সময় রাজনৈতিক প্রতিকূলতা ও সরকারি দমননীতির মধ্যেও তিনি নিজ বাড়ী শিকড় থেকে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন বলে জানা গেছে। তৃণমূল সংগঠনকে শক্তিশালী রাখা এবং নেতাকর্মীদের পাশে থাকা এই দুটি বিষয়ই তাঁর রাজনীতির মূল শক্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এএসএম আব্দুল হালিম, সাবেক উপজেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা। প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ও ক্লিন ইমেজের কারণে তিনি তৃণমূলে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছেন। বিগত সরকারের সময় তাঁর বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা হয়। সে সময় গোয়েন্দা বাহিনী ও পুলিশ কর্তৃক দৈহিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। তিনি বিভিন্ন ইউনিয়নে নিয়মিত সাংগঠনিক কাজ করছেন। আগামী নির্বাচনে নিম্নোক্ত নির্বাচনী প্রতিশ্র“তি দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে উঠান বৈঠক, সভা, সমাবেশ করছেন তিনি। যমুনা নদীর উপর দিয়ে ২য় সেতু বা টানেল নির্মাণ, বেকারত্ব দূরীকরণের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা, যমুনার তীরে নদী বন্দর ও পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন, আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, যমুনা নদী শাসন ও হাইওয়ে রাস্তা, ঢাকা টু বাহাদুরাবাদ ডাবল রেলপথ স্থাপন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা উন্নয়ন, মাদক নির্মূল, নারী শিক্ষার অগ্রগতি ও শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নসহ বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করবেন।
শরিফুল ইসলাম খান ফরহাদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সহোদর ছোট ভাই। তিনি বলেন, আমি প্রতিশ্র“তি দিতে আসিনি, দায়িত্ব নিতে চাই আপনাদের বিশ্বাস নিয়ে। ইসলামপুরের উন্নয়নে আমার শ্রম ও সামর্থ্য সবকিছু নিবেদন করব ইনশাআল্লাহ। আমি চাই ইসলামপুর হোক উন্নত, স্বচ্ছ ও সেবামূলক রাজনীতির উদাহরণ। আমরা আর কথার রাজনীতি চাই না আমরা চাই কাজের রাজনীতি। যুব সমাজের কর্মসংস্থান, কৃষকের ন্যায্যমূল্য, নদী ভাঙ্গন রোধ, শিক্ষার মান উন্নয়ন, নারীর নিরাপত্তা ও সম্মান, চরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন এই লক্ষ্যেই আমি কাজ করতে চাই। দীর্ঘদিন থেকে এলাকায় গণসংযোগ উঠান বৈঠক, সভা সমাবেশ করে যাচ্ছেন।
আরশাফুজ্জামান খান (বড় লিটন) বীর উত্তম শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে চার দশক ধরে বিএনপির রাজনীতিতে নিবেদিত আছেন। ১৯৮৬ সাল থেকে ছাত্রদলের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৭ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের শুরুতেই কলেজ কমিটির আহ্বায়ক ও উপজেলা কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হয়। ১৯৯৫ সালে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য ছাত্রদলের আইকন হিসেবে পরিচিতি পান। পরে ইসলামপুর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দলের জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে সুনাম অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ৫ নং ওয়ার্ড সভাপতি ও সবুজবাগ থানা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। শহীদ জিয়ার আদর্শ ও ৩১দফা বাস্তবায়নে তিনি আজও অবিচল।
এড. মোঃ সেলিম মিয়া, ইসলামপুর উপজেলা বিএনপির নির্বাহী সদস্য, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্টের আহবায়ক কমিটির সদস্য, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ও যুবদল নেতা, সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের আইনজীবী ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য। ছাত্র জীবন থেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আন্দোলন-সংগ্রামে নির্যাতিত হয়ে তিনি এলাকায় আইনি সহায়তার সৈনিক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। বিএনপির নির্যাতিত সকল শ্রেণীর নেতা কর্মীদের হাইকোর্টে আইন-সহায়তা দিয়ে সুনাম কুড়িয়েছেন। ৩১ দফার লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি জনগণের দোয়া ও সর্মথন নিয়ে উন্নয়ন ও জনকল্যাণে কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
শওকত হাসান মিয়া, ইসলামপুর উপজেলা উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ও সবুজবাগ থানা বিএনপি’র সদস্য তিনি বলেন, আল্লাহ আমাকে অনেক দিয়েছেন আমি ইসলামপুরবাসীর ভাগ্য পরিবর্তন করতে চাই, দারিদ্র্যমুক্ত জীবন গড়াসহ নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকার অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে চাই। এলাকার জনগণের কাজ থেকে আমার কোন কিছু চাওয়ার নেই, ইসলামপুরবাসী আমাকে সুযোগ দিলে সমাজ উন্নয়নে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাব ইনশাল্লাহ। ইসলামপুর উপজেলা উন্নয়ন কমিটি হতদরিদ্র মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। জামালপুরবাসীর মুখ উজ্জ্বল করতেই আমি ঢাকায় জামালপুর টুইন টাওয়ার নাম দিয়েছি। আমি এলাকাবাসীর জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা ও বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি।
এ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী ড. মোঃ ছামিউল হক ফারুকী। তিনি ইসলামী ছাত্র শিবিরের বগুড়া মোস্তাফাবিয়া আলীয়া মাদরাসার সভাপতি ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি ছিলেন। পরে ইসলামপুর উপজেলা ও জামালপুর জেলা আমীর এবং গাজীপুর জেলা সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের পরিচালক।
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তিনি বারবার গ্রেফতার ও কারাভোগ করেছেন। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে ইসলামপুর আসনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। বর্তমানে তিনি দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তার অঙ্গীকার নির্বাচিত হলে ইসলামপুরের নদীভাঙন প্রতিরোধ, যোগাযোগ, শিক্ষা, চিকিৎসা ও কৃষির উন্নয়ন করবেন। হতদরিদ্রদের সেবা, তরুণদের কর্মসংস্থান এবং ইনসাফভিত্তিক আধুনিক ইসলামপুর গঠনে কাজ করবেন ইনশাআল্লাহ।
মাওলানা সুলতান মাহমুদ সিরাজি, সেক্রেটারি ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ, জামালপুর জেলা শাখা। তিনি একজন বিশিষ্ট আলেম, শিক্ষানুরাগী ও মানবাধিকার কর্মী। জামালপুর-২ ইসলামপুর আসনে নির্বাচিত হয়ে তিনি আদর্শিক শিক্ষা, উন্নত চিকিৎসা, সড়ক যোগাযোগ, বেকারত্ব নিরসন ও মাদকমুক্ত ইসলামপুর গঠনে উদ্যোগ নেবেন।
নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্র“তি দিয়ে তিনি বলেন, দুর্নীতি নামক ভাইরাসকে নির্মূল করব, ইনশাআল্লাহ। তিনি আরও বলেন, আমার দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে দুর্নীতিবাজদের স্থান নেই আমরা শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে উন্নয়ন জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেব।
ইসলামপুরের রাজনৈতিক মাঠে এখন বিএনপি ও ইসলামী সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতায় সরব তৃণমূল রাজনীতি। ভোটারদের কাছে মন জয়ের লড়াই শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই।
ইসলামপুরে তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়েছে নির্বাচনের উত্তাপ, প্রচারণায় সরগরম বিএনপি ও ইসলামী নেতৃত্ব
