তারিকুল ইসলাম তারা : কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলা শীতকালে হয়ে উঠেছে মধু আহরণের কেন্দ্রস্থল। বিশেষ করে সীমান্ত ঘেঁষা ভারত-বাংলাদেশ বর্ডার হাটের আশপাশের এলাকা এখন সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহের প্রাণকেন্দ্র। সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহে প্রাকৃতিক শোভা যেমন মন কাড়ছে, তেমনি দূর-দূরান্ত থেকে আসা মধু চাষীরা এখানে ভিড় জমাচ্ছেন মধু আহরণের উদ্দেশ্যে।
সরিষা ক্ষেতে মৌচাষীদের ব্যস্ততা : সরে জমিনে দেখা যায়, সরিষা ক্ষেতের পাশে সারি সারি বসানো হয়েছে মৌমাছির বাক্স। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মৌচাষীরা এসব বাক্স থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত। তারা জানান, এই সময়ে সরিষা ফুলের মধুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। কারণ, এর স্বাদ এবং মান অত্যন্ত উন্নত। মধু চাষীরা বলেন, “সরিষা ফুলে মৌমাছি খুব সহজে বসে। ফলে এই সময়ে মধু সংগ্রহ করা তুলনামূলক সহজ এবং লাভজনক। আমরা প্রতিবছর এই মৌসুমের জন্য অপেক্ষা করি।”
সীমান্ত এলাকার ভূমিকা : রাজিবপুর সীমান্ত এলাকা মধু চাষের জন্য একটি আদর্শ স্থান। এখানকার বিশাল সরিষা ক্ষেত, নিরাপদ পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক আবহাওয়া মৌমাছি পালন এবং মধু উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এ বিষয়ে রাজিবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন মিয়া জানান, মধু চাষ রাজিবপুরে কৃষকদের জন্য নতুন এক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। মৌমাছি পালন শুধু মধু উৎপাদনের জন্য নয়, বরং সরিষার ফলন বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অর্থনীতিতে অবদান : মধু চাষ রাজিবপুরের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে এই মধু সরবরাহ করা হয়। ফলে এখানকার চাষীদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে।
স্থানীয় মধু চাষীরা জানান, “সরিষার মধুর প্রতি চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। আমরা চাই সরকারের সহায়তায় রাজিবপুরে একটি আধুনিক মধু প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র স্থাপন করা হোক, যা আমাদের পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছে দিতে সহায়তা করবে।”
পর্যটকদের আকর্ষণ : শুধু মধু চাষ নয়, রাজিবপুরের সরিষা ক্ষেত এখন পর্যটকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। হলুদ ফুলের মাঠে সময় কাটাতে অনেকেই এখানে আসছেন। স্থানীয়ভাবে এ ধরনের পর্যটন আরও বিকাশের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা : রাজিবপুরের মধু চাষ আরও সম্প্রসারণে উদ্যোগ নিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। ইতোমধ্যে চাষীদের প্রশিক্ষণ, আধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহ এবং সহজ ঋণ সুবিধা প্রদান করার আশ্বাস দিয়েছেন । রাজিবপুরের এই সম্ভাবনাময় খাতকে কেন্দ্র করে পুরো অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
শীতকালের সরিষা ক্ষেত এখন শুধু সৌন্দর্যের নয়, বরং রাজিবপুরের মানুষের জীবিকারও প্রতীক হয়ে উঠেছে। মধু আহরণের এই ধারা ভবিষ্যতে আরও সমৃদ্ধির পথ দেখাবে, এমনটাই আশা করছেন এখানকার মানুষ।