দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বৈত নাগরিকত্ব, ঋণ খেলাপি ও এক শতাংশ ভোটারের সমর্থনে গরমিলসহ বিভিন্ন কারণে নির্বাচন কমিশনে মনোনয়ন বাতিল হওয়া অন্তত ১৭ প্রার্থীর বিষয়ে আপিল বিভাগে শুনানি হবে আগামীকাল।
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির বেঞ্চে শুনানির জন্য এসব আবেদন কার্যতালিকায় উঠেছে। এর মধ্যে ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শামীম হক, বরিশাল-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী শাম্মী আহমেদ, বরিশাল-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর প্রার্থিতার বিষয়েও শুনানি হবে।
দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ এনে ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শামীম হকের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল করেছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যবসায়ী এ কে আজাদ। শামীম হক নেদারল্যান্ডসের নাগরিক বলে অভিযোগ আনেন তিনি। এরপর শুনানি শেষে ১৫ ডিসেম্বর আপিল মঞ্জুর করে শামীম হকের মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয় ইসি। তার বিরুদ্ধে রিট করেন শামীম হক।
১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট তার রিট সরাসরি খারিজ করে দেন।
পরে ১৮ ডিসেম্বর আপিল বিভাগে প্রার্থিতা ফেরত চেয়ে শামীম হক আবেদন করেন। ওই দিন চেম্বার আদালত তার প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেন। এরপর এ আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেন এ কে আজাদ। যে আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ২ জানুয়ারি দিন ধার্য রয়েছে। আবেদনটি কার্যতালিকার ২ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে।
বরিশাল-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী শাম্মী আহমেদ ও একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজ দেবনাথ পরস্পরের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল করেছিলেন ইসিতে। শাম্মী আহমেদ অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হলেও তা গোপন করেছেন বলে অভিযোগ ছিল পঙ্কজের।
নির্বাচন কমিশন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঢাকার অস্ট্রেলিয়া দূতাবাসের সহায়তায় এ অভিযোগের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের নির্দেশনা দেয়।
সে অনুযায়ী ঢাকার অস্ট্রেলিয়া দূতাবাসের সহায়তায় শাম্মী আহমেদের অস্ট্রেলিয়ার দ্বৈত নাগরিকত্ব সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে জরুরি ভিত্তিতে ১৪ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে পাঠানোর পর ১৫ ডিসেম্বর শাম্মী আহমেদের মনোনয়ন বাতিল হয়। আর একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজ দেবনাথের প্রার্থিতা বহাল থাকে।
পরে শাম্মী আহমেদ হাইকোর্টে রিট করেন। যেটি ১৭ ডিসেম্বর সোমবার খারিজ হয়ে যায়।
পরদিন তিনি আপিল বিভাগে আবেদন করেন। শুনানি শেষে চেম্বার আদালত ‘নো অর্ডার’ আদেশ দেন। ফলে হাইকোর্টের আদেশ বহাল থেকে যায়।
এরপর তিনি ফের আবেদন করেন। তার আবেদনটি শুনানির জন্য কার্যতালিকার ৪ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে।
বরিশাল-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগে প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল করেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ ফারুক। ১৫ ডিসেম্বর নির্বাচন ভবনে আপিল শুনানি শেষে বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সিটির সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরে এই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন সাদিক আব্দুল্লাহ।
তার করা রিটের শুনানি নিয়ে ১৮ ডিসেম্বর হাইকোর্ট নির্বাচন কমিশনের আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়। ফলে সাদিক আবদুল্লাহর মনোয়নপত্র বৈধতা পায়। পরদিন হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন জাহিদ ফারুক। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন চেম্বার আদালত। এর ফলে সাদিক আব্দুল্লাহর নির্বাচন আটকে যায়। পরে তিনি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেন। যেটি শুনানির জন্য ৩ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে।
এ ছাড়া যশোর-৪ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এনামুল হক বাবুল, গাজীপুর-৪ আসনে ভাজউদ্দীন আহমদের ভাগিনা আলম আহমেদসহ আরও প্রার্থীদের আবেদন শুনানির জন্য কার্যতালিকাভুক্ত রয়েছে।