Thursday, May 2, 2024
Homeজাতীয়‘কিডনি সুরক্ষা বিমা’ চালুর দাবি

‘কিডনি সুরক্ষা বিমা’ চালুর দাবি

কিডনি রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। চিকিৎসা করতে গিয়ে পুরো পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। অনেকে টাকার অভাবে চিকিৎসাও করাতে পারেন না। ফলে কিডনি জটিলতার রোগে আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ‘কিডনি সুরক্ষা বিমা’ চালুর দাবি করেছে কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পাস)।

শনিবার (৯ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক আলোচনা সভায় এ দাবি উত্থাপন করে প্রতিষ্ঠানটি।

‘বিশ্ব কিডনি দিবস-২০২৪’ উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের শীর্ষস্থানীয় কিডনি বিষয়ক বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ক্যাম্পাস’-এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাম্পাসের প্রতিষ্ঠা ও সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ। তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোতে ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজন স্বাস্থ্য বিমার মাধ্যমে হয়। রোগীর পকেট থেকে দিতে হয় না। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আংশিক খরচ সরকার বহন করে থাকে। আশা করি, শিগগিরই আমাদের দেশে কিডনি সুরক্ষা বিমা চালু হবে। যার ফলে হয়ত কিডনি রোগীদের মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হবে এবং সবাইকে চিকিৎসার আওতায় আনা যাবে।

ডা. সামাদ বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে, ২০৪০ সালের মধ্যে ৫০ লাখের বেশি কিডনি বিকল রোগী সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করবে। বর্তমানে ৮৫ কোটির বেশি মানুষ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত। দুঃখজনক হলেও সত্য এরমধ্যে ৭৫ কোটি রোগী জানে না যে মরণঘাতী কিডনি রোগ নীরবে তাদের কিডনি নষ্ট করে চলেছে। প্রতি বছর ১ কোটি ৩০ লাখ লোক আকস্মিক কিডনি বিকল রোগে আক্রান্ত হয় যার ৮৫ শতাংশই আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে। উন্নত দেশে কিডনি বিকলের চিকিৎসা করতে গিয়ে সরকার হিমশিম খাচ্ছে।

বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগীর হার শতকরা ১৬-১৮ শতাংশ। কিডনি রোগের শেষ পরিণতি কিডনি বিকল। একবার কিডনি বিকল হয়ে গেলে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় কিডনি সংযোজন অথবা ডায়ালাইসিস। কিন্তু এই চিকিৎসা এতটাই ব্যয়বহুল যে, শতকরা ১০ জন কিডনি বিকল রোগীও তা বহন করতে পারে না। তাই আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে প্রায় ৯০ শতাংশ রোগী বিনা চিকিৎসায় অথবা আংশিক চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেন। পক্ষান্তরে, সবাই যদি কিডনি রোগের ব্যাপকতা, ভয়াবহতা, পরিণতি ও কারণ সম্পর্কে সচেতন থাকেন এবং স্বাস্থ্য সম্মত জীবনযাপন করেন তা হলে ৫০-৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে এই মরণঘাতী কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা সম্ভব।

কিডনি রোগ প্রতিরোধে পরামর্শ তুলে ধরে ডা. সামাদ বলেন, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত ব্যায়াম ও কায়িক পরিশ্রম করা, পরিমিত স্বাস্থ্যসম্মত বা সুষম খাবার গ্রহণ, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, ধূমপান পরিহার করা, পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পান করা, তীব্র মাত্রার ব্যথার ওষুধ পরিহার করা। তাছাড়া যারা ঝুঁকিতে আছেন যেমন; যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ওজন বেশি, বংশে কিডনি রোগ আছে, যারা ধূমপায়ী, যারা তীব্র মাত্রার ব্যথার ওষুধ খেয়েছেন, যাদের আগে কোনো কিডনি রোগের ঝুঁকি আছে তাদের বছরে অন্তত ২ বার প্রস্রাব ও রক্তে ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। কেননা প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি রোগ শনাক্ত করতে পারলে চিকিৎসার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, রোগ হয়ে গেলে অনেক ঝামেলা। আমাদের টার্গেট থাকবে কিডনি রোগ হওয়ার আগে আমাদের সচেতনতার মাধ্যমে প্রতিরোধ করতে হবে। সচেতনতায় সাংবাদিক, ধর্মীয়গুরু, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষকসহ সমাজের নেতৃত্ব পর্যায়ের সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, দেশে ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ রয়েছেন যারা বিভিন্ন ধাপে কিডনি রোগে আক্রান্ত। সম-অধিকার যদি চাই তাহলে বিমা ছাড়া কোনো উপায় নেই। একজন মানুষ চিকিৎসা করতে গিয়ে কেন দেউলিয়া হবেন। এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের সেদিক নজর রাখতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের শস্য অনেক ভালো, আমাদের খাদ্যে কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের খাদ্যগুলো তৈরি করার জন্য অনেক পরিমাণ কীটনাশক দেওয়া হয়। এই কীটনাশকযুক্ত খাবারগুলো আমাদের কিডনির সমস্যার জন্য দায়ী, এটা প্রমাণিত। তবে আমরা কিন্তু দেখিনি খাদ্যে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে কী পরিমাণ কিডনি রোগ বাড়ছে। এই গবেষণাগুলো করা আমাদের খুবই প্রয়োজন। বাত ব্যথার ওষুধ সঠিক নিয়ম অনুযায়ী না কিনলে কিডনির ভয়ংকর কন্ডিশন হতে পারে। পাশাপাশি আমি বলবো অ্যান্টিবায়োটিক যত্রতত্র ব্যবহার করলে, নির্দেশিত নিয়ম অনুযায়ী না খেলে কিডনির জন্য সমস্যা। এই নির্দেশিত নিয়মের জন্য আমরা কাজ করছি।

জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, কিডনি রোগ ৭০-৮০ শতাংশ প্রতিরোধে সম্ভব। আমরা প্রতিরোধের কথা বলি, মানুষ শুনছে না। কিন্তু আমরা কেউ গবেষণা করিনি যে কোনভাবে বললে মানুষ শুনবে।

Most Popular

Recent Comments