Thursday, May 2, 2024
Homeআন্তর্জাতিকগাজায় খাবারের জন্য হাহাকার, গাধার মাংস খাচ্ছেন অনেকে

গাজায় খাবারের জন্য হাহাকার, গাধার মাংস খাচ্ছেন অনেকে

টানা দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় আকাশ ও স্থলপথে হামলা করে চলেছে ইসরায়েল। এতে করে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ওই ভূখণ্ডটিতে তীব্র মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। সংকট এতোটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, গাজার লোকেরা রুটির জন্য ভিক্ষা করছেন।

এমনকি পরিবারের সদস্যদের ক্ষুধা মেটাতে বাধ্য হয়ে গাধার মাংস খাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলমান সংঘাতের মধ্যে রুটির জন্য ভিক্ষা করা, একটি মটরশুটির কৌটার জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে ৫০ গুণ বেশি অর্থ প্রদান এবং পরিবারকে খাওয়ানোর জন্য গাধা জবাই করার বর্ণনা দিয়েছেন গাজার লোকেরা।

মূলত ইসরায়েলের অবিরাম হামলার কারণে খাদ্য সহায়তার ট্রাকগুলো ফিলিস্তিনি এই ভূখণ্ডের বেশিরভাগ অংশে পৌঁছাতে পারছে না। আর এই কারণে সহায়তাবাহী গাড়িবহরের চলাচল এবং ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

জাতিসংঘের মানবিক কার্যালয় ওসিএইচএ বৃহস্পতিবার বলেছে, মিসরের সীমান্তের কাছে রাফাহ এলাকায় সীমিত সাহায্য বিতরণ করা হচ্ছে। সেখানে গাজার মোট ২৩ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক এখন বসবাস করছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে।

সংস্থাটি বলছে, ‘তীব্র সংঘাত এবং প্রধান সড়কে চলাচলে নিষেধাজ্ঞার কারণে গাজা উপত্যকার বাকি অংশে সাহায্য বিতরণ অনেকাংশে বন্ধ হয়ে গেছে।’

গাজা শহর থেকে বাস্তুচ্যুত আবদেল-আজিজ মোহাম্মদ নামে ৫৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি বলেন, ‘সাহায্য? কী সাহায্য? আমরা এটি সম্পর্কে শুনেছি, কিন্তু আমরা সেটি দেখতে পাচ্ছি না।’

বাস্তুচ্যুত হওয়ার পর আবদেল-আজিজ মোহাম্মদ ও তার পরিবার এবং অন্য তিনজনসহ মোট প্রায় ৩০ জন উপত্যকাটির আরও দক্ষিণে বসবাসকারী বন্ধুদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। টেলিফোনে তিনি বলেন, ‘আমার একটি বড় বাড়ি, খাবার এবং মিনারেল ওয়াটারে ভরা দুটি ফ্রিজ ছিল। বাড়িতে বিদ্যুৎ সুবিধা ছিল। এই যুদ্ধের দুই মাস পর এখন আমি কিছু রুটির জন্য ভিক্ষা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটি ক্ষুধার যুদ্ধ। তারা (ইসরায়েল) আমাদের বাড়িঘর থেকে জোরপূর্বক বের করে দিয়েছে, তারা আমাদের বাড়িঘর এবং ব্যবসা ধ্বংস করেছে এবং আমাদের আরও দক্ষিণে নিয়ে গেছে যেখানে আমরা হয় তাদের বোমার আঘাতে বা আর না হয় ক্ষুধায় মারা যেতে পারি।’

ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান বৃহস্পতিবার বলেছেন, ক্ষুধার্ত লোকেরা খাবার নিয়ে যাওয়ার জন্য এবং সরাসরি তা খেয়ে ফেলার জন্য তাদের সাহায্যবাহী ট্রাক থামিয়ে দিচ্ছে।

রয়টার্স বলছে, গত অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের প্রথম পর্বে উত্তর গাজা অঞ্চলটি ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর ব্যাপক আক্রমণের মুখে পড়েছিল। তবে ২৪ নভেম্বর গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর সাতদিন পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও সেখানে আবারও তীব্র যুদ্ধ শুরু হয়েছে এবং যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর থেকে খুব কমই সেখানকার মানুষ সাহায্য পেয়েছে।

উত্তর গাজার জাবালিয়ার সাংবাদিক ইউসুফ ফারেস বলছেন, ময়দার মতো প্রধান জিনিস পাওয়া এখন এতটাই কঠিন যে যুদ্ধের আগের তুলনায় এর দাম ৫০ থেকে ১০০ গুণ বেড়ে গেছে।

ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আজ সকালে আমি একটি রুটির সন্ধানে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি তা খুঁজে পাইনি। বাজারে যা অবশিষ্ট আছে তা হলো- শিশুদের জন্য মিছরি এবং শিমের কিছু ক্যান। যার দামও বেড়েছে ৫০ গুণ।’

তিনি বলেন, ‘আমি এমন একজনকে দেখেছি যে তার পরিবারের কয়েকশ সদস্যকে খাওয়ানোর জন্য একটি গাধা জবাই করেছে।’

রয়টার্স বলছে, সমস্ত ত্রাণবাহী ট্রাক মিসরের রাফাহ সীমান্ত দিয়ে গাজায় প্রবেশ করছে, তবে গাজায় প্রবেশের আগে সেগুলো প্রথমে পরিদর্শন করছে ইসরায়েল। গত ২০ অক্টোবর সহায়তা সরবরাহ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল এবং মিসরের মধ্যে অবস্থিত নিতজানা ক্রসিংয়ে ট্রাকগুলো পরিদর্শন করা হচ্ছে। এর ফলে কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি হয়েছে।

তবে গত বুধবার থেকে ইসরায়েল অন্য একটি স্থানেও অতিরিক্ত পরিদর্শন শুরু করেছে। আর তা হচ্ছে ইসরায়েল এবং গাজার মধ্যে অবস্থিত কেরেম শালোম ক্রসিং। সাহায্যকারী কর্মকর্তারা বলেছেন, সহায়তা প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধাগুলো কমাতে হবে।

জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলেছেন, গত বুধবার ১৫২টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে, আর এর আগের দিনে সেই সংখ্যা ছিল প্রায় ১০০টি। তবে এটি গাজায় উদ্ভূত মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য যা প্রয়োজন তার একটি ছোট অংশ মাত্র।

আর তাই রাফাহতে ফেরত যাওয়ার পরিবর্তে কেরেম শালোমের মাধ্যমে সরাসরি গাজায় ট্রাক যেতে দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, কেরেম শালোমের মাধ্যমে ট্রাক চলাচলের সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে বিদ্যমান অবস্থার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটাতে পারে ইসরায়েল। কিন্তু সেটা তারা করছে না।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এরপর থেকে টানা দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলি এই আগ্রাসনের নিহত হয়েছেন ১৮ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি। নিহত এসব ফিলিস্তিনিদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু।

Most Popular

Recent Comments