Friday, May 17, 2024
Homeআন্তর্জাতিকগাজায় শোক করার জন্য অবশিষ্ট কেউ থাকবে তো?

গাজায় শোক করার জন্য অবশিষ্ট কেউ থাকবে তো?

টানা দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। অবিরাম এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া গাজায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে প্রতিদিনই।

এমনকি পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, গাজায় হতাহতদের নিয়ে শোক করার জন্য কেউই যেন আর বাকি থাকছে না। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ড এখন এমন একটি জায়গা যেখানে প্রতিটি ফোন কলেই কাউকে না কাউকে হত্যার খবর পাওয়া যাচ্ছে, প্রতিটি বার্তায় এখন কারও বন্ধু বা প্রিয়জনের বাড়ি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা জানা যাচ্ছে এবং প্রতিটি বিমান হামলা অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ফিলিস্তিনিদের হৃদয়ে ভয়ের কাঁপুনি সৃষ্টি করে।

ফিলিস্তিনের এই ভূখণ্ডে ‘বাড়ি’ এখন আর বসবাস এবং বিশ্রামের জন্য অভয়ারণ্য নয়; এটি এখন কেবলই একটি অনিশ্চিত অস্তিত্ব, যেন সতর্কতা ছাড়াই আকস্মিক ধ্বংসের কোনও বিষয়।

আল জাজিরা বলছে, গাজার ফিলিস্তিনিরা এখন সবচেয়ে বড় যে আশাকে আঁকড়ে ধরে আছেন, তা হলো- তাদের পরিবারের সাথে বেঁচে থাকা, প্রিয়জনের হৃদয় বিদারক ক্ষতি এড়ানো বা সম্মিলিত মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়াটা এড়ানো।

গাজায় কেউ শোক করতে বাকি নেই। পরিস্থিতি এমন যে, যারা শান্তিপূর্ণভাবে পালিয়ে যেতে পেরেছেন বা গোলাবর্ষণ এবং হত্যালীলার চলমান উন্মাদনা থেকে রক্ষা পেয়েছেন তাদেরকে গাজার কিছু লোক এখন যেন হিংসা করছেন।

দিন-রাত অবিরাম বোমা বর্ষণ করে হত্যাযজ্ঞ চললেও গাজায় যুদ্ধ থামানোর প্রচেষ্টার দিকে মনোনিবেশ করার পরিবর্তে বিশ্ব এখন এখানকার লোকদের সাহায্য সরবরাহের ওপর জোর দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

মূলত গাজার জনগণের খাদ্য, পানি বা অন্যান্য সহায়তার চেয়েও এখন সবচেয়ে বেশি যা প্রয়োজন তা হলো চলমান নির্বোধ সহিংসতা, রক্তপাত এবং ধ্বংসের অবসান ঘটানো। তারা যুদ্ধ বন্ধের জন্য আর্তনাদ করছেন।

আল জাজিরার এক সাংবাদিক বলছেন, গাজায় ইসরায়েলের হামলা ১৮ তম দিনে গড়িয়েছে এবং গত তিন দিন ধরে ইন্টারনেট সংযোগের অভাবের কারণে এসব নোট ডায়েরিতে শেয়ার করা যায়নি। তবুও, সময়ের সাথে সাথে এখানে উল্লেখযোগ্যভাবে কোনও কিছুই পরিবর্তন হয় না। গাজা ভূখণ্ড মৃত্যু এবং ধ্বংসের পুনরাবৃত্তিমূলক চক্রে আটকা পড়েছে। আর এটিই যেন দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে বর্তমান বিশ্ব।

বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল

গতকাল গাজার সাংবাদিক রোশদি সররাজের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর আগের দিন ৯ সদস্যের একটি পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী সাধারণ ফিলিস্তিনিদের গাজা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর তারা দেইর এল-বালাহে তাদের আত্মীয়ের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানেও হামলা হলে প্রাণ হারান তারা।

শুধুমাত্র কাতারে বসবাসরত বিবাহিত কন্যা নূর এই ট্র্যাজেডি থেকে বেঁচে গেছেন। দোহা থেকে ফোনে নূর তার পরিবারের নিহত সদস্যদের ছবি পাঠানোর অশ্রুসিক্ত আবেদন জানালেও সেটি সম্ভব ছিল না। কারণ তার পরিবারের ছবি তোলার জন্য অনুনয় করার আগেই তাদের দাফন সম্পন্ন হয়।

এমন বাস্তবতায় ফিলিস্তিনি কবি মাহমুদ দারবিশের একটি বাণীই যেন বারবার সামনে আসছে: ‘মৃত্যু কখনও মৃতকে কষ্ট দেয় না, এটি কেবল জীবিতদেরই কষ্ট দেয়।’

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। তাদের অবিরাম নির্বিচার এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার।

যদিও ইসরায়েল দাবি করছে তারা হামাসের অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। তবে হামাসের যোদ্ধাদের চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনিরা।

Most Popular

Recent Comments