জাতীয় কবিতা পরিষদের সাথে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মতবিনিময় সভা

বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য হরণের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে একটি ন্যায্য, মানবিক, গণতান্ত্রিক এবং অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে জাতীয় কবিতা পরিষদ এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট। জাতীয় পর্যায়ে একটি বৃহত্তর গণঐক্য গঠনের প্রয়াসে পরিষদ ধারাবাহিকভাবে দেশের অগ্রণী রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের সঙ্গে যৌথ মতবিনিময় সভার আয়োজন করছে।

এই ধারাবাহিকতায়, আজ সোমবার, ১২ মে ২০২৫, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি–এর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। এই সভায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এবং জাতীয় কবিতা পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
সভায় দেশব্যাপী ক্রমবর্ধমান বৈষম্য, মৌলবাদী হুমকি এবং সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটি সমন্বিত কণ্ঠ তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। উভয় পক্ষ একটি গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, সাম্যবাদী ও বহুস্বরভিত্তিক সাংস্কৃতিক বাংলাদেশ গঠনে পারস্পরিক সহযোগিতা ও বোঝাপড়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।
সভায় বক্তব্য রাখেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হান, সাধারণ সম্পাদক কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, উপদেষ্টা মন্ডলীর অন্যতম সদস্য কবি মতিন বৈরাগী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবি শ্যামল জাকারিয়া, জনসংযোগ সম্পাদক কবি রফিক হাসান, সহ-সভাপতি গোলাম শফিক, এবিএম সোহেল রশিদ। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য আকবর খান।

এছাড়াও সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কবিতা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দের মধ্যে কবি নুরুন্নবী সোহেল, কবি ইউসুফ রেজা, কবি আসাদ কাজল, কবি রোকন জহুর, কবি শিমুল পারভিন, কবি সবুজ মনির, কবি নাহিদ হাসান, কবি তাসকিনা ইয়াসমিনসহ আরো অনেকে এবং ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, মীর মোফাজ্জল হোসেন মোস্তাক, মীর রেজাউল আলম, আকবর খান, আবু হাসান টিপু, বাবর চৌধুরী প্রমুখ।

সভা প্রসঙ্গে জননেতা সাইফুল হক বলেন,  সাইফুল হক বলেন- কবিরা না থাকলে এই পৃথিবী বাসযোগ্য হতোনা। সমাজের যেকোন সংকটে সবার আগে কবিরাই তাদের লেখনির মাধ্যমে সাড়া দেয়, প্রতিবাদ করে, সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে সমাজ পরিবর্তনে অন্যতম ভূমিকা পালন করে। বর্তমান দেশের অবস্থা কোনদিকে যাচ্ছে সেটা নিয়ে দেশের সকল সংবেদনশীল মানুষ চিন্তিত। বর্তমান সরকার ৩ টা তত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ পার করে আসা স্বত্ত্বেও সাধারণ মানুষের গ্রহণযোগ্যতা লাভ করতে পারেনি। এখনো পর্যন্ত মানুষের জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তা ঠিক হয়নি। দেশে একটা আধা নৈরাজ্যিক পরিস্থিতি চলছে। দেশে বর্তমানে বেপরোয়া তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে যেখানে যে যা ইচ্ছে করতে পারে এবং কাজ ও অকাজকে জায়েজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শহীদের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি আর এখনিই কিছু মানুষ রাষ্ট্রীয় এজেন্ডার বাইরে স্বার্থ উদ্ধারের কাজে ব্যস্ত। দেশে বিচারের নামে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য গণহারে মামলা দেয়া হচ্ছে ফলে প্রকৃত অপরাধী ও হত্যাকারীরা বেঁচে যাবার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে। ভারত সম্প্রতি গুজরাট থেকে মুসলিমদের ধরে খাগড়াছড়ি সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। এসব সহ পূর্বের রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ না নিয়ে সরকার মানবিক করিডোরের চুক্তির দিকে হাঁটছে যেটা পরবর্তিতে সামরিক করিডোর হিসেবে পর্যবেশিত হতে পারে।”

তিনি জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনকে তাদের সকল কাজ ১ থেকে দেড় মাসের কধ্যে সম্পন্ন করার আহবান জানান। এবং সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন- আপনারা নতুন নতুন এজেন্ডা না খুলে দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার করুন এবং দেশে গণতন্ত্র পুনঃস্থাপন করুন। তবেই আমরা আপনাদের সাথে আছি, পাশে আছি। যদি দেখি আপনারা পথ হারিয়ে ফেলছেন তাহলে আমাদেরকে আপনাদের পাশে পাবেন না।” জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতি দেশের সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে কার্যক্রম চালিয়ে যাবার ব্যাপারেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

কবি মোহন রায়হান বলেন- বর্তমান সময়ে যারা ধর্মীয় উগ্রতা ও সংস্কৃতি দমন করে জনগণের মনন বিকাশকে রুদ্ধ করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতেই এই মতবিনিময় সভাগুলো। আমরা বিশ্বাস করি, কবিতা ও রাজনীতি—দুটি শক্তিই সমাজ পরিবর্তনের অন্যতম নিয়ামক। তাই জাতীয় কবিতা পরিষদ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মানবিক, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতে একটি বৃহৎ ঐক্য গড়তে ভূমিকা রাখবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছি। আজ বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।”

কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন বলেন- ধর্মান্ধ মৌলবাদী শক্তি আমাদের ঐতিহ্য এবং উত্তরাধিকারকে ভিন্ন পথে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। এ দেশের মুক্তচিন্তার গণ মানুষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখবে এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সুরক্ষা দেবে। এর জন্য একটি গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মান করতে হবে। সেজন্য- নির্বাচন হতে হবে অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক।”

কবি মতিন বৈরাগী বলেন- কবিরা সবসময় জাতির প্রয়োজনে জীবন দিতেও পিছপা হয় না। তারা স্বপ্ন দেখেন সুন্দরের। কবিদের হাত ধরেই দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে।”