Saturday, May 11, 2024
Homeরাজনীতিঢাকা ১৬ আসন আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি, বিএনপি'র নেই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী

ঢাকা ১৬ আসন আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি, বিএনপি’র নেই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী

মিরপুর ১২ নম্বর এলাকায় বাড়ি আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্যআলহাজ্ব  ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্। স্থানীয়ভাবে ‘মোল্লাহ বাড়ি’ নামে পরিচিত। সকাল নয়টায় বাড়িটির সামনে মানুষের ভিড়। কেউ এসেছেন সন্তানের স্কুলের বেতন মওকুফ করতে, কারও জমিজমা নিয়ে ঝামেলা। বাড়ির ফটক ঠেলে মোল্লাহ্ বাড়ির ভেতরে ঢুকে দেখা যায় মানুষে গমগম করছে। বাড়ির তিনটি কক্ষে ৭০-৮০ জন মানুষ। সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লাহ্ একে একে মানুষের কথা শুনছেন। প্রয়োজনে থানার ওসিকে কিংবা বিরোধকারী ব্যক্তিকে ফোন দিচ্ছেন। কখনো ঠান্ডা গলায়, কখনো কোমল সুরে। সকাল থেকে শুরু হয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত ইলিয়াস মোল্লাহ্’র বাড়ির চিত্র এমনই থাকে।

স্থানীয়রা জানান, মিরপুরের আধিপত্য আর রাজনীতির মাঠে মানুষটি শুধুই নেতা নন, একজন প্রভাবশালী জননেতা। তাই সালিশ-বিচার, বিরোধ নিষ্পত্তি সব কিছুই তার হাতে। এই এলাকায় যত ঝামেলাই হোক, থানা-পুলিশ-আদালতে যাওয়ার আগে মোল্লাহর কাছে সবাই যান। আর এই রেওয়াজ দীর্ঘদিনের।

তাই ঢাকার উত্তরের সীমান্তবর্তী মিরপুরের পল্লবী ও রূপনগর থানা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৬ আসনটি প্রভাব-প্রতিপত্তি আর জনপ্রিয়তায় এগিয়ে ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্। রাজনীতির দৃশ্যমান শক্তিশালী প্রতিপক্ষ না থাকায় এই আসনে একচেটিয়া আধিপত্য তার।স্থানীয়রা জানান, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বিএনপি বা অন্য কোনো দলের স্থানীয় শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় বাইরের কোনো ব্যক্তি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এখানে সুবিধা করতে পারবেন না। গত নির্বাচনেও একই চিত্র দেখা গেছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। তিনি ইলিয়াস মোল্লাহ্র কাছে বড় ব্যবধানে পরাজিত হন। বিহারিদের নাগরিকত্বের বিষয়ে একটি মামলায় রফিকুল ইসলাম উচ্চ আদালতে তাদের পক্ষের আইনজীবী ছিলেন। এ ছাড়া ইলিয়াস মোল্লাহ্র ভাই এখলাস মোল্লাহ্ বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু ২০০৮ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করায় কার্যত আসনটি এক দলের আসনে পরিণত হয়েছে।

ঢাকা-১৬ উত্তর সিটি করপোরেশনের ২, ৩, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এই আসনের ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৬৩ হাজার। এই আসনে ১৯৯১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ছয়টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারবার আওয়ামী লীগ, দুবার বিএনপি জিতেছে। এক সময় বৃহত্তর মিরপুরের এই আসনটি ছিল ঢাকা-১১, তা ভেঙে তিনটি আসন করা হয়।সরেজমিন পল্লবী, রুপনগর ও মিরপুর সাড়ে ১১ ঘুরে দেখা গেছে, বিএনপির শক্তিশালী কোনো প্রার্থীর প্রচার নেই নির্বাচন ঘিরে। স্থানীয়ভাবে কোনো নেতার দৃশ্যমান তৎপরতাও চোখে পড়েনি। নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়নে, প্রচারে-পোস্টারে শুধু ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্কেই দেখা গেছে।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে এ আসনে (অবিভক্ত) বিএনপির মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন প্রয়াত হারুনুর রশীদ মোল্লাহ্। এর পর আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য হন তারই মেজ ছেলে ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্। দীর্ঘদিন ধরেই পারিবারিকভাবে এই আসনটিতে ‘মোল্লাহ্’ পরিবারের একটা দৃশ্যমান প্রভাব আছে।

গত পাঁচ বছরে এই আসনের ওপর দিয়ে যেমন মেট্রোরেল গড়িয়েছে, তেমনি ফ্লাইওভারে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। কালশী ফ্লাইওভার আসনটির যোগাযোগে বিপ্লব ঘটিয়েছে। এ ছাড়া অধিকাংশ সড়ক প্রশস্ত ও পাকা। তেমন ভাঙা সড়ক নেই বললেই চলে। এক সময়ের ত্রাসের আসন এখন আলো ঝলমল ভবন আর বিপণি সেন্টারে ছেয়ে গেছে। এ ছাড়া রয়েছে ঐতিহ্যবাহী বেনারসি পল্লী।

তৈরি পোশাকের কারখানা ঘিরে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি এখনো আর আগের মত নেই বললেই চলে।

সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্ বলেন, আমার আসনে প্রায় সব সড়কই পাকা হয়েছে, ভাঙা সড়ক কেউ দেখাতে পারবে না। মানুষ এখন মেট্রোরেলে চেপে কয়েক মিনিটে উত্তরা পৌঁছে যাচ্ছে। এখন মতিঝিলে ও যাচ্ছে। মানুষের সঙ্গেই সারাদিন আমার চলাফেরা। আমি যেমন তাদের হাঁড়ির খবর রাখি, তারাও অন্তর থেকে আমাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসে। আগামী নির্বাচনেও নৌকা প্রতীকে তিনি মনোনয়ন চাইবেন বলে নিশ্চিত করেন।

Most Popular

Recent Comments