Friday, May 3, 2024
Homeজামালপুরনানা অনিয়মে জর্জরিত ইসলামপুরের কিশোর কিশোরী ক্লাব

নানা অনিয়মে জর্জরিত ইসলামপুরের কিশোর কিশোরী ক্লাব

মোহাম্মদ আলী : দুর্নীতি নানা অনিয়ম ও সেচ্ছারিতায় জর্জরিত ইসলামপুরের কিশোর কিশোরী ক্লাবগুলো। অনিয়মিত ক্লাবিং, নেই সাইনবোর্ড, জরাজীর্ণ কক্ষ, ১দিনের নাস্তার টাকায় চালানো হচ্ছে ২দিন! আছে আরও অনিয়ম। সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে , ইসলামপুর উপজেলায় মোট ১৩টি কিশোর কিশোরী ক্লাব রয়েছে। প্রতিটি ক্লাবে আছে ২জন শিক্ষক ৩০জন শিক্ষার্থী (১০ জন ছেলে ও ২০জন মেয়ে)। এছাড়া ক্লাবগুলো পর্যবেক্ষণ করার রয়েছেন ৩জন জেন্ডার প্রমোটর। সপ্তাহে ২দিন শুক্র ও শনি ১ ঘন্টা করে ক্লাব করার কথা। ক্লাবের ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রতিদিন মাথাপিছু ৩০ টাকা পরিমাণ নাস্তা বরাদ্দ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে একজন কারাতে শিক্ষক। দীর্ঘ ১মাস (অক্টোবর) সময় নিয়ে ইসলামপুর উপজেলার ১৩টি কিশোর কিশোরী ক্লাবে অনুসন্ধান চালিয়েছে দৈনিক আজকের জামালপুর প্রতিনিধি। এ অনুসন্ধানে উঠে এসেছে দুর্নীতি ও অনিয়মের নানা চিত্র। যা পাঠকদের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরা হলো। ডিগ্রিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। চরগোয়ালিনী ইউনিয়নের একটি কিশোর কিশোরী ক্লাব। শুক্রবার এ ক্লাবের খোঁজ নিতে গেলে বন্ধ পাওয়া যায়। এলাকাবাসী জানিয়েছেন কয়েক মাস যাবত এক্লাবের কার্যক্রম বন্ধ আছে। বেনুয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চরপুটিমারি ইউনিয়নের আরেকটি ক্লাব। এক্লাবে গিয়ে উপস্থিত পাওয়া যায় ১৫জন ছাত্র ছাত্রীকে। শিক্ষক শহিদুল ইসলাম জানান, ক্লাবে ৩০জন ছাত্র ছাত্রী থাকার কথা থাকলেও সেদিন বাকীরা আসেনি। টেবিলের উপর বিস্কুটের প্যাকেট দেখে নাস্তার ব্যাপারে জানতে চাইলে ছাত্র ছাত্রীরা জানায়, তাদেরকে শুক্রবারে ১০ টাকা দামের বিস্কুট ও শনিবারে ২০ টাকা দামের জুস দেওয়া হয়। এভাবেই ১০ মাস যাবত চলছে। গাইবান্ধা ইউনিয়নের পোড়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্লাবের অবস্থা আরও শোচনীয়। পরিত্যক্ত ভবনের এক জরাজীর্ণ কক্ষে চলে ক্লাব। অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ। বাদ্যযন্ত্রগুলো অকেজু। এখানে উপস্থিতও কম নাস্তার ধরণও এক। ১দিন ১০ টাকা দামের বিস্কুট আরেক দিন ২০ টাকা দামের জুস দেওয়া হয়। তাও আবার মানহীন। কুলকান্দি কিশোর কিশোরীদের ক্লাবের অবস্থা একই রকম। এ ক্লাবে পাওয়া যায়নি অর্ধেক ছাত্র ছাত্রী। মুখ শিমলা ক্লাবে গিয়ে তালাবদ্ধ পাওয়া গেছে। এলাকাবাসী জানান, এক্লাব চলে শিক্ষকদের ইচ্ছামতো। তারা যেদিন মন চায় আসে যেদিন চায় না আসে না। শিক্ষক যেদিন না আসে ছেলে মেয়েরা এসে অপেক্ষা করে চলে যায়। গত মাসে একদিনও চলেনি সাপধরী ক্লাব। এক্লাবের শিক্ষিকা সালমা এ মাসে ক্লাবে না যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমাদের বাড়ি থেকে ক্লাব বেশ কয়েক মাইল দূরে। তারপর আবার পাড়ি দিতে হয় বড় নদী। এছাড়া শারিরীক সমস্যার কারণে আমি ও ইয়াসমিন দুজনেই এমাসে যেতে পারিনি। উলিয়াসহ পুরো উপজেলার কিশোর কিশোরীদের ক্লাবের চিত্র প্রায় একই রকম। তবে, ইসলামপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও বেলাগাছার উপস্থিতি পরিবেশ ছিল ব্যতিক্রম। বন্ধ বা অনিয়মিত ক্লাবগুলোর জন্য বরাদ্দকৃত নাস্তা কোথায় যায়? কে খায়? ১০ মাসেও কেন ক্লাসে আসে নাই কারাতে শিক্ষক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ক্লাবের ছাত্র ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের মাঝে। তাদের ধারণা নাস্তা বা টাকা আত্মসাৎ করছে সংশ্লিষ্টরা। এব্যাপারে জানতে চাইলে জনৈক জেন্ডার প্রমোটর জানান, ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি ও ক্লাবগুলো চলা না চলার ব্যাপারে আমাদের জবাবদিহিতা থাকলেও নাস্তা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদানের ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই। ইসলামপুর মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা যেভাবে চালান ক্লাবগুলোর সেভাবেই চলে। অনুসন্ধানে উঠে আসা কিশোর কিশোরীদের ক্লাবের চিত্র তুলে ধরে ইসলামপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত) কামরুন্নাহার বলেন, নাস্তার বরাদ্দ থেকে ১৮% টাকা কেটে নেয় ব্যাট ও আয়কর হিসেবে। এছাড়া নাস্তা পরিবহন খরচ দিতে হয়। সব বাদে যা থাকে তা দিয়েই আমাকে চালিয়ে নিতে হয়। বাকি বিষয়গুলোর ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি এতসব জানতাম না। আপনার মাধ্যমে জানলাম। এব্যাপারে সকল বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের শোকজ করা হবে।

Most Popular

Recent Comments