এক বছরের ব্যবধানে স্বামী ও মেয়েকে হারিয়ে পাগলপ্রায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম। শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাতে শিক্ষক ও সহপাঠীকে দায়ী করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করে অবন্তিকা। ঘটনার আগে সন্ধ্যা থেকেই তাকে বিষণ্ণ লাগছিল বলে জানান অবন্তিকার মা।
তিনি বলেন, মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগেও সে আমাকে পানি দিয়ে গেছিল। কিছুক্ষণ পর ওর রুমে ফ্যানের শব্দ না পেয়ে ডাকাডাকি করি। কোনো সাড়া পাইনি। পরে ছেলেকে নিচে পাঠাই। ছেলে দারোয়ানকে নিয়ে মই দিয়ে পূর্ব পাশের জানালা খুলে দেখতে পায়, ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে ও। এরপর পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা পুলিশের একজন সদস্যসহ আমরা ওকে নামাই। এরপর কুমিল্লা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে গেলে ডাক্তার বললেন সে আর নেই।
ফাইরুজ অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম মেয়ের আত্মহত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে আরও বলেন, সন্ধ্যার পর মেয়েকে বিষণ্ন দেখেছিলাম। তখন মন খারাপ কেন জানতে চেয়েছিলাম। অবন্তিকা শুধু বলেছিলেন, এমনি। কিন্তু মেয়ে যে আত্মহত্যা করবে, এটা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি। বুঝতে পারলে কী আর তাকে আমি একা থাকতে দিতাম বলেই শিশুর মতো ডুকরে কেঁদে ওঠেন তাহমিনা শবনম।
এ সময় তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘এটাই বুঝি আমার প্রাপ্য ছিল। একটা বিধবা নারীর প্রাপ্য ছিল। প্রথমে স্বামী চলে গেল আর এখন আমি সন্তানহারা। আমি এর বিচার কার কাছে দেব? আমি জীবনে কারও ক্ষতি করি নাই। কুমিল্লা শহরের কেউ বলতে পারবে না আমি কারও ক্ষতি করেছি। আমি সবসময় চেষ্টা করেছি ১ টাকা ভাগ করে খেতে। আজকে আল্লাহ আমার এত বড় ক্ষতি করল?’
প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাতে সহকারী প্রক্টর ও আম্মান সিদ্দিকী নামের এক সহপাঠিকে দায়ী করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস নেন ফাইরুজ অবন্তিকা নামের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক ছাত্রী। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও ‘পিসি পার্ক স্মরণিকা’ নামের ১০ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলার বাসায় আত্মহত্যা করেন তিনি। স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনা দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের জন্ম দিয়েছে।
মৃত ফাইরুজ অবন্তিকা কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকার বাসিন্দা। তিনি কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষক প্রয়াত অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের মেয়ে।