মোহাম্মদ আলী : মানুষের দ্বারেদ্বারে ঘুরে, অবজ্ঞা অবহেলা সহ্য করে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, দুইহাত পেতে ভিক্ষা করে এনে তিল তিল করে যে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, আজ থেকে ১৫ বছর আগে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে সেই প্রতিষ্ঠান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল প্রতিষ্ঠাতাকে। সময়ের আশির্বাদে ১৫ বছর পর সেই প্রতিষ্ঠান ফিরে পেলেন প্রতিষ্ঠা, মাওলানা মেরাজুর রহমান জামালপুরী পীর সাহেব। গতকাল বুধবার, পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে তাকে স্বপদে বহাল ও মাদ্রাসার যাবতীয় দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়েছে। জানা যায়, জামালপুর জেলার পাথালিয়া গ্রামের বাসিন্দা মাওলানা মেরাজুর রহমান জামালপুরী ১৯৮১ সালে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় তাঁর নিজ গ্রাম পাথালিয়ায় ” জামালুল উলুম ” নামে একটি কওমী মাদ্রাসা চালু করেন। তারপর থেকে নিজের গ্রাম ছাড়াও জেলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছ থেকে দান খয়রাত ও সাহায্য সহযোগিতা সংগ্রহ করে এর সম্প্রসারণ এবং বর্ধিত করণ করতে থাকেন। বাড়তে থাকে ছাত্র শিক্ষক। ছড়িয়ে পড়তে থাকে এর পরিচিতি ও সুখ্যাতি। এভাবেই অল্প পরিসরে শুরু করা ছোট্ট দ্বীনি প্রতিষ্ঠানটি ২০১০ সালের মধ্যে বিশাল মসজিদ ও দ্বিতল মাদ্রাসায় পরিনত হয়। এর আয়োতন দাঁড়ায় প্রায় ২০ বিঘার মতো। পাঠদানে স্বীকৃতি লাভ করে দাউরা হাদিস (মাসটার্স) পর্যায়ে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটির নতুন নামকরণ হয় “আল- জামিয়াতুল ইসলামীয়া জামালুল উলুম মাদ্রাসা ও এতিমখানায় “। জামালপুর জেলায় এটিই স্বর্বৃহত্ত দ্বীনি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।এমতাবস্থায় মাদ্রাসার মুহতামিম, মাওলানা, মেরাজুর রহমান হজ্জব্রত পালনে সিদ্ধান্ত নেন। এসময় তিনি কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। কিন্তু, হজ্জ শেষে তিনি দেশে ফিরলেও প্রতিষ্ঠানে ফিরতে পারেননি। কারণ তৎকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটি তাঁর প্রতি ছাত্র শিক্ষক সঙ্কট ও দায়িত্ব কর্তব্য অবহেলাসহ নানা অভিযোগ এনে তাঁকে প্রতিষ্ঠান থেকে সরিয়ে দেন।সেই থেকে ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত তিনি প্রতিষ্ঠান থেকে বাহিরে ছিলেন। এব্যাপারে আল- জামিয়াতুল ইসলামীয়া জামালুল উলুম মাদ্রাসার মুহতামিম, মাওলানা মেরাজুর রহমান জামালপুরী পীরে কামেল বলেন, ২০১০ সালের পর আমার জীবনের উপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেছে তাতে যে মহান আল্লাহ পাক আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন তাতেই বেশি। আমার বিরুদ্বে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে, ষড়যন্ত্র করে আমার মাদ্রাসা কেড়ে নেওয়া হয়েছে, আমাকে হেফাজত নেতা বলে পুলিশি হয়রানি করা হয়েছে, বাড়িতে থাকতে দেওয়া হয়নি। আমি ধৈর্য্য ধরে সহ্য করে থেকেছি। আর আল্লাহ পাকের কাছে দোয়া করেছি। অনেকদিন পড়ে হলেও আল্লাহ আমার সে দোয়া কবুল করেছেন। আজ আমি আমার সন্তানকে ( প্রতিষ্ঠান) ফিরে পেয়েছি। সেজন্য মহান রবের প্রতি শুকরিয়া। উল্লেখ্য যে, মাওলানা মেরাজুর রহমান জামালপুরী পীর সাহেব আল- জামিয়াতুল ইসলামীয়া জামালুল উলুম মাদ্রাসা ছাড়াও এলাকা ও এলাকার বাইরে বেশ কয়েকটি মসজিদ মাদ্রাসা গঠন করেছেন। এলাকাবাসী জানান, এলাকায় দ্বীনি প্রতিষ্ঠান কায়েমে মাওলানা মেরাজুর রহমান জামালপুরী পীর সাহেবের ভূমিকা প্রশংসনীয়। কিন্তু, তিনি যদি তাঁর ওজন বিবেচনায় নিয়ে রাগ, জেদ পরিহার করে ভারত্বের সাথে চলতে পারেন তাহলে আগামী দিনে তাঁর সম্মান আরও বৃদ্ধি পাবে, ইনশাআল্লাহ!
১৫ বছর পর প্রতিষ্ঠান ফিরে পেলেন প্রতিষ্ঠাতা
