১৮ বছর পেরিয়ে গেলো জামালপুরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম

নিজস্ব সংবাদদাতা : জামালপুর উচ্চ বিদ্যালয়টি নানা সমস্যায় জর্জড়িত হয়ে পড়েছে। ১৮ বছর ধরে পরিত্যক্ত ভবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম। বিদ্যালয় সুত্রে জানাযায়, শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষের নির্দ্দেশে বিগত ১৮বৎসর যাবত ভবনটি পরিত্যাক্ত ঘোষনা করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানে জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে পরিত্যক্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের নীচতলায় বিদ্যালয়ের সকল প্রকার দাপ্তরিক কর্মকান্ড, প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষসহ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের নিচ তলায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান অব্যাহত রয়েছে। বিদ্যালয় সুত্রে জানাযায়, জামালপুর পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত জেলার সর্বোচ্চ বেসরকারি বিদ্যাপীঠ এর মধ্যে অন্যতম একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামালপুর উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি ১৯৬৪ইং সালে স্থাপিত হওয়ার পর থেকে সুনামের সাথে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। বিগত ২০০৭ সালে শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক বিদ্যালয়ের দ্বিতল বিশিষ্ট মূল ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ১৮বৎসর অতিবাহিত হলেও বিদ্যালয়টি পুর্ণমেরামত কিংবা নতুন ভবন তৈরি না হওয়ায় পরিত্যক্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের নীচতলায় প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষ বিদ্যালয়ের সকল প্রকার দাপ্তরিক কাজকর্মসহ, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান অব্যাহত রয়েছে। যে কোন সময় ভবনটি ধ্বসে ঘটে যেতে পারে অনাকাংখিত হৃদয়বিদারক ঘটনা। সরেজমিনে বিদ্যালয়টি ঘুরে দেখা যায়, আঠারো বছর আগে পরিত্যাক্ত ঘোষনা করা বিদ্যালয়ের ভবনের কক্ষগুলোতে ঢ়ুকেই দেখা যায় স্যাঁত স্যাঁতে মেঝে আর খসে ধ্বসে পড়ছে পলেস্তারার দৃশ্য। কক্ষগুলো বেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন। ভবনের সিঁড়িটির বেশ প্রশস্থ প্রায় দশ ফুট। সামান্য বৃষ্টি হলে ছাদ চুঁইয়ে সিঁড়ি বেয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে পানি। যে কোন মুর্হর্তে সিঁড়িটিও ভেঙ্গে পরতে পারে। এ কারনে ঝুঁকিপূর্ণ এই সিঁড়িটি দিয়ে শিক্ষার্থীদের চলাচল সম্পুর্ণরুপে বন্ধ রাখা হয়েছে। ভবনের অভাবে পুরাতন মূলভবনে এখনও চলছে প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষ, প্রশাসনিক কক্ষ, শিক্ষকদের বিশ্রামের কক্ষ ও বিশাল মিলনায়তন। ঝুঁকিপূর্ণ সিঁড়ির ডান পাশের কক্ষে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়ার পাশাপাশি চলে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শ্রেণী কক্ষের পলেস্তেরা খসে পরছে। খসে পরা পলেস্তেরার আঘাতে মাঝে মধ্যে আহতও হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র সাদিক, সাজিদ, রাইন, শ্রাবণ, ইউসুফ, সজিব, বলেন, মূল ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তাছাড়াও ওই ভবনেই আমাদের প্রধান শিক্ষকের কক্ষ ছাড়াও রয়েছে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কক্ষ। ভবনের যে করুণ দশা, তাতে আমাদের খুব ভয় হয়। পুরাতন জরাজীর্ণ ভবন ভেঙ্গে নতুন করে ভবন নির্মাণের দাবি জানান ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়টির এডহক কমিটির অভিবাবক প্রতিনিধি সাংবাদিক মো.মুস্তাফিজুর রহমান কাজল বলেন, ভবনটি যেহেতু বহু বছর ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ তাই ব্যবহার করা ঠিক হবে না। কারণ যে কোন কারনে ভবনটি ধ্বসে পরে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয় তাহলে এর দায় দায়িত্ব কে নেবে ? বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সুজানুর রহমান জানান, আমাদের বিদ্যালয়ের মূল ভবনটিই মারাতœক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ভবন পরিত্যক্ত ঘোষনা করার পর সাবেক দুই প্রধান শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র বণিক ও মো.শাহ্জাহান পুরাতন ভবনের কিছু অংশ ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণ করার পরও বিদ্যালয়ের মূল ভবনটিই চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সামান্য বৃৃষ্টির পানিতে ছাদ চুইয়ে পুরো ভবনই ভিজে স্যাঁত স্যাতে হয়ে যায়। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনটি ভেঙ্গে নতুন ভবন তৈরী করা খুবই জরুরী বলে তিনি মনে করেন। বিদ্যালয় পরিচালনা এডহক কমিটির সভাপতি ও জামালপুর জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মো.লোকমান আহমেদ খান লোটন বলেন, জামালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনের প্রশাসনিক ভবন ও দোতলার মূল সিঁড়ি খুবই ঝুকিপূর্ণ। যে কোন সময় ভবন ধসে বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই দূর্ঘটনা এড়াতে বিদ্যালয়ের মূল সিঁড়ি ব্যবহার করা বন্ধ রয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জীর্ণ ভবনে বসেই প্রধান শিক্ষকসহ সকল শিক্ষকগণ নানা প্রশাসনিক কাজ করে থাকেন। তিনি দূর্ঘটনা এড়াতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সুদৃষ্টি কামনা করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার উদাত্ব আহবান জানান। এ ব্যাপারে জামালপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়িতা অধিকারী বলেন, বিদ্যালয়ের মূল ভবনটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বিশেষ করেবিদ্যালয়ের সম্মুখ অংশে সিঁড়িটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ তাই যত দ্রুত সম্ভব জেলা কনডেমনেশন কমিটির অধীনে একটি কারিগরি উপ-কমিটি গঠন করতে হবে। কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের পর আরো কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে বলে জানান।