আসমাউল আসিফ : উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে জামালপুরের দুই উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে মেলান্দহ উপজেলায় জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মো: দিদারুল পাশা ও মাদারগঞ্জে উপজেলা আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রায়হান রহমতুল্যাহ চেয়ারম্যান পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনে কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি, সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠানের জন্য প্রশাসন ছিলো তৎপর।
মেলান্দহ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মো: দিদারুল পাশা (মোটর সাইকেল) ৭৮ হাজার ৬৬৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি মো: এমদাদুল ইসলাম (আনারস) পেয়েছেন ১২ হাজার ৩১১ ভোট। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে মো: ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ (চশমা) ৪৩ হাজার ৩৫০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি মুহাম্মদ হাসমত উল্লাহ (তালা) পেয়েছেন ২৮ হাজার ৩৩২ ভোট। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জোনাকি (কলস) ২৭ হাজার ৬৮০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি ফারজানা ফরিদ (ফুটবল) পেয়েছেন ১৯ হাজার ৬১৮ ভোট।
এদিকে মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে টানা তিন বার নির্বাচিত বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: ওবায়দুর রহমান বেলালকে পরাজিত করে প্রথম বারের মত চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রায়হান রহমতুল্যাহ। বেসরকারি ফলাফলে রায়হান রহমতুল্যাহ (কাপ-পিরিচ) পেয়েছেন ৪১ হাজার ৩২২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি মো: ওবায়দুর রহমান বেলাল (দোয়াত-কলম) পেয়েছেন ২৫ হাজার ২২৫ ভোট। এছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান পদে মো: হেলালুর রহমান (টিউবয়েল) ৫৫ হাজার ৮১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি শফিকুল (তালা) পেয়েছেন ২৯ হাজার ১৭৭ ভোট। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লাইলী বেগম (ফুটবল) ৫০ হাজার ২৩৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি মোছা: ডলি আক্তর (কলস) পেয়েছেন ৪১ হাজার ২৮৭ ভোট।
উল্লেখ্য, গত ২০২০ সালের ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় জমি নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জেরে মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ি বাজারের ঠাকুরবাড়ি মোড়ে সার ও কিটনাশক ব্যবসায়ী নওশের আলী অতর্কিত হামলার শিকার হন। মাদারগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রায়হান রহমতুল্যাহর নেতৃত্বে এ হামলা হয়। রায়হান কিবরিয়া রিমন, আবুল হোসেন, রবিউল ইসলাম, বায়েজিদসহ সন্ত্রাসীরা হামলা করে। এ হামলায় নওশের আলী গুরুতর আহত হন, পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে নিহত ব্যবসায়ীর বড় ছেলে মো: আব্দুল্লাহ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত রায়হান রহমতুল্যাহসহ আটজনকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। এরপর ব্যবসায়ী নওশের আলীকে হত্যার অভিযোগে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রায়হান রহমতুল্যাহ সহ অন্যান্য আসামীদের ফাঁসির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে নিহত ব্যবসায়ীর পরিবার। সংবাদটি বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার হয়। তাছাড়া ওই হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি হিসেবে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়। পাশাপাশি রায়হান রহমতুল্যাহ মাদারগঞ্জ কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির সভাপতি ও রূপসী বাংলা সমবায় সমিতির পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে থাকাকালীন আইন লঙ্ঘন করে গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করেন এবং তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সংগঠনের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হওয়ায় চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল মাদারগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের মাসিক সভায় তাকে অব্যাহতি দেয়া হয় এবং সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য তাকে নোটিশ দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার চন্দ বলেন, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেউ যদি কোন মামলায় চার্জশিটভূক্ত আসামী হয় তবে তাকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। মাদারগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রায়হান রহমতুল্যাহকেও সে কারণে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, তিনি এখন এই পদবী ব্যাবহার করতে পারবেন না। তিনি আরও জানান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ব্যাতীত আর কোন ইউনিটের চূড়ান্ত অব্যাহতি দেয়ার এখতিয়ার নেই। তবে তিনি কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছেন কিনা জানা নেই।
তৃতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বুধবার সকাল ৮টা থেকে মেলান্দহ উপজেলার ১১০টি ও মাদারগঞ্জ উপজেলার ৬৩টি ভোটকেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। মেলান্দহ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করেন। মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করেন।
নির্বাচনের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ২ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ১৮ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, ৪ প্লাটুন বিজিবি, ৪ টিম র্যাব সহ পুলিশ ও আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন।