লিয়াকত হোসাইন লায়ন : বছর ঘুরে আসে কোরবানী ঈদ। ঈদকে ঘিরে চারিদিকে আনন্দ উৎসব ও চলছে কোরবানীর পশু ক্রয়ের ধুম। অন্যদিকে বিভিন্ন সরঞ্জামাদী বানাতে ছুটছেন কামার শালায়।
ঈদের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, টুং টাং শব্দে ততই কামার পরিবার ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। দিনরাত পরিশ্রম করে তৈরি করছে হরেক রকমের দা,ছুরিসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। ক্রেতা সাধারনদের ভীড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে কামারদের দোকান গুলো। কামার শিল্পীদের দম ফেলার ফুসরত নেই।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জামালপুরের ইসলামপুর পৌর শহরের ফকিরপাড়ার কামারপাড়ায়,চাড়িয়া পাড়া,রেলগেইট, মধ্যে দরিয়াবাদ,দিঘলকান্দি,চিনাডুলী ইউনিয়নের গুঠাইল বাজার,গংগাপাড়া, মহলগিরি বাজার,নাপিতের চর বাজারে দা,বটি,চাপাতি,ছুরি বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কয়লার দগদগে আগুনে পুড়িয়ে পিটিয়ে তৈরি করছেন,দা,বটি,ছুরি,কুরাল,চাকুসহ ধারালো হাতিয়ার। অনেকেই আবার পুরাতন দা,ছুরিগুলো মেরামতের জন্য কামারের দোকানে দাড়িয়ে আছেন। ঈদের আরো কয়েকদিন বাকি থাকলেও জমে উঠেয়ে কামারীর দোকান। কয়েকজন কামার শিল্পীদেও সাথে কথা বলে জানাযায়,পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ৩শত থেকে ৪শত টাকা,দা ৫শত থেকে ৭শত টাকা,বটি ৭শত থেকে হাজার টাকা,পশু জবাই ছুরি ৮শত থেকে দেড় হাজার টাকা বিক্রি করছেন।
ঈদের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, টুং টাং শব্দ ততই বেড়ে চলেছে। দিনরাত পরিশ্রম করে তৈরি করছে হরেক রকমের দা,ছুরিসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। পৌর শহরের ফকির পাড়া কামারপাড়া ও চাড়িয়াপাড়া কামারপাড়া এলাকায় কামার শিল্পীরা সকলেই হিন্দু সম্প্রাদায়ের। তাদের সকলেরই পত্তিক সুত্রে পাওয়া এ পেশা।
ফকির পাড়া কামার শিল্পী রঞ্জিত কর্মকার বলেন, আগের মত আর তেমন কাজ নেই। এখন আমাদের এ পেশায় নুন আনতে পানতা ফুরায়। সারা বছর কাজ না থাকায় মুসলমানদের ধর্মীয় এ উৎসবে অপেক্ষায় থাকি। তাতে কিছুটা হলেও পুষিয়ে উঠা যায়। বাপদাদার পেশা এ পেশাই জীবন বাচাঁই,ছাড়তেও পারিনা। তারপরেও কয়লার দাম বেশী হওয়ায় আমাদেও হিমশিম খেতে হয়।
সুদিন কর্মকার বলেন, কোরবানী ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে আমাদের ব্যবসা তত বাড়ছে। তবে আমাদের জ্বালানি কয়লা,লোহা দাম বাড়ছে। কিন্তু জিনিষের দাম বাড়েনি। সারা বছর কাজ না থাকায় অলস সময় কাটাতে হয়। ফলে ওই সময় কোন উপার্জন না থাকায় ছেলে মেয়ে নিয়ে খবই কষ্টে দিন কাটাতে হয়।
কাচ্চু কর্মকার বলেন, বাপ দাদার পৈত্তিক পেশা করে জীবন বাচানো খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে আমাদের। আমাদের জন্য ডিজিটাল কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি সরকার। তাই পেটের দায়ে পৈত্তিক পেশা ছেড়ে বাধ্য হয়ে আমাদের অনেকেই এখন অন্য পেশায় ঝুকছেন।
চাড়িয়া পাড়া কামারবাড়ীর বিপ্লব কর্মকার বলেন, আগের তুলনায় এখন কয়লা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। কয়লা পাওয়া গেলেও দাম অনেক চড়া। আমরা আমাদের ব্যবসায় কোন ঋন পাইনা। কয়লা পরিবর্তে গ্যাস গিয়ে কাজ করলে ভাল হইতো। এই সামর্থ আমাদের নাই। তারপরেও ঈদের সামনে কষ্ট করে কাজ করতেছি বেশী কামানো আশায়।
দোকানে আসা ক্রেতা মোবারক হোসেন বললেন, গরু কোরবানীর জন্য একটা ছুরি অর্ডার দিয়েছি। ঈদ আসলে দাম একটু বাড়ে। একহাজার দ্ইুশত টাকা,তবুও অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কোরবানী কেনার যে সময় লাগে এখন তার চেয়ে বেশী সময় সরঞ্জামাদী বানাতে ব্যয় হয়। এতক্ষন অপেক্ষায় থেকে টুং টাং শব্দে আমরা অস্থির আর উপার্জনে ব্যস্ত কামারীরা।