জনসেবায় বিঘ্ন না ঘটাতে এবং আসন্ন শারদীয় দূর্গোৎসবকে সামনে রেখে সরকারি কর্মচারিদের বেতন-ভাতা বিল পাস নিশ্চিত করতে মহামান্য উচ্চ আদালতের রায় এবং উক্ত রায় পর্যালোচনাপূর্বক মাননীয় আইন উপদেষ্টা জনাব আসিফ নজরুল স্যারের ইতিবাচক মতামত থাকা সত্ত্বেও “অডিটরদের একই পদে দুই ধরণের” বেতন গ্রেড বৈষম্য নিরসনের আন্দোলন চলমান এবং আগামীতে অডিট এন্ড একাউন্টস ডিপার্টমেন্টের সংস্কারের আন্দোলনও আসছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত এবং আন্দোলনে আহত সকলের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।
আপনারা অবগত আছেন আমরা নিজ নিজ অধিকার আদায়ের জন্য স্বেচ্ছায় অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে আমাদের অফিস চত্ত্বরে সুদীর্ঘ সাতচল্লিশ দিন যাবত গণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছি এবং ডিপার্টমেন্টের সকল পর্যায়ের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের ব্যানারে (অডিট এন্ড একাউন্টস অফিসার, এসএএস সুপার, অডিটর, জুনিয়র অডিটর) অডিটরদের ন্যায্য অধিকারের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
মহামান্য উচ্চ আদালতের রায় (রিট পিটিশন নং-৯৩৯৯/২০১৫) অবমাননা এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় আইন উপদেষ্টা জনাব আসিফ নজরুল স্যারের ইতিবাচক মতামতকে উপেক্ষা করে ‘অডিটর’ পদটিকে ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীত না করে অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে বৈষম্যমূলক প্রহসনের জিও জারির প্রেক্ষিতে আমাদের এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
প্রহসনমূলক জিও জারির প্রতিবাদ জানিয়ে বিগত ২২/০৯/২০২৪ খ্রি. তারিখ আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সিএজি অফিসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গেলে সিএজি অফিস কর্তৃক রাষ্ট্রীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী (সেনাবাহিনী, র্যাব, এপিবিএন, দাঙ্গা পুলিশ, আনসার) মোতায়েন করে আমাদেরকে কাকরাইল অডিট ভবনের সামনের রাস্তায় অবরুদ্ধ করে রেখে আমাদের অহিংস ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে রাস্তায় ব্লকেড সৃষ্টিতে বাধ্য করে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অডিট ভবনের ভিতর আমাদের কর্মসূচি পালন করতে পারিনি। প্রায় ৪ ঘন্টা পর সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে অডিট এন্ড একাউন্টস ক্যাডার কয়েকজন কর্মকর্তা আমাদের আন্দোলনের সহিত অর্থাৎ অডিটর পদটিকে ২৩/১২/২০১৮ খ্রি. তারিখ হতে ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণের পক্ষে নামমাত্র সংহতি প্রকাশ করেন।
শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি শেষে আমরা আমাদের অফিস চত্ত্বরে অর্থাৎ সিজিএ চত্ত্বরে ফিরে আসার সময় রাষ্ট্রীয় পেটোয়া পুলিশ বাহিনী দিয়ে আমাদের নিরস্ত্র অডিটরদের উপর লাঠিচার্জ, জল কামান চালানো হয় এবং কয়েকজন নারী সহকর্মী পুলিশ কর্তৃক লাঞ্চিত হন। পরবর্তীতে ঐদিন রাতে পুলিশ বাদী হয়ে রমনা থানায় ৩০০/৪০০ জন অজ্ঞাতনামা অডিটরের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করে।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী এবং সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারী নন ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বিরুদ্ধে সিএজি, সিজিএ এবং সিজিডিএফ কার্যালয় কর্তৃক প্রস্তুতির সময় ব্যতীত বাংলাদেশের দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে হয়রানি ও বিদ্বেষমূলক গণবদলী আদেশ করা হয়। অবিলম্বে উপরিল্লিখিত হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা এবং গণবদলী আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে।
অডিট এন্ড একাউন্টস ডিপার্টমেন্টের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অর্থাৎ অডিটর, সুপার ও একাউন্টস অফিসারগণ মহামারি কোভিড-১৯ এর লকডাউনে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে রাষ্ট্রের সকল দপ্তরের বেতন-ভাতাদি পরিশোধে নিজ নিজ কাজে নিয়োজিত ছিল। উল্লেখ্য যে বর্তমানে আমাদের এই চলমান শান্তিপূর্ন অবস্থান কর্মসূচির মধ্যেও জরুরি সেবা (পেনশন, জিপিএফ, বেতন-ভাতাদি) কার্যক্রম চালু রেখেছি। জনসেবায় বিঘ্ন না ঘটাতে বিভিন্ন ধরণের সরকারী বিল পাস, সরকারি কর্মচারিদের সেপ্টেম্বর মাসের বেতন-ভাতা বিল পাস এবং আসন্ন শারদীয় দূর্গোৎসবকে সামনে রেখে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উৎসব বোনাস নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। উক্ত সেবা প্রদান করার পাশাপাশি আমাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে ।
রাষ্ট্রের আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে অডিট এন্ড একাউন্টস ডিপার্টমেন্টের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সর্বদা সচেষ্ট ও আন্তরিক। জুলাই/২০২৪ বিপ্লবের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সমগ্র বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যমান বৈষম্য দূরীভূত হলেও অডিট এন্ড একাউন্টস ডিপার্টমেন্ট এর অডিটরগণ এখনো স্বৈরাচারের দোসরদের দ্বারা চরমভাবে বৈষম্যের স্বীকার। আমরা বিশ্বাস করি অডিটর পদের ১০ম গ্রেড আমাদের দাবী নয়, এটা আমাদের অধিকার। অনতিবিলম্বে অডিটর পদকে ২৩/১২/২০১৮ খ্রি. হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করে “জি.ও.” জারি এবং হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা এবং গণবদলী আদেশ প্রত্যাহার না করা হলে ‘মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস স্যারের’ রাষ্ট্রসংস্কারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বতন্ত্র অডিট সচিবালয় গঠনসহ অডিট এন্ড একাউন্টস বিভাগের সংস্কারের জন্য কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি প্রদান করা হবে।