শেরপুর সংবাদদাতা : শেরপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। নকলা উপজেলার পুরানো ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ঘেঁষা দক্ষিণ নারায়ণখোলা, চরঅষ্টধর ও দেবুয়ারচর গ্রামে ওই ভাঙনে প্রতি বছর নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা ও ফসলি জমি। এতে গত এক দশকে ওইসব এলাকার অন্তত শতাধিক পরিবার বসতভিটা, ফসলি জমি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকে নদীর ওপারে জেগে ওঠা চরে বসতি গড়েছেন। কেউ আবার কাজের খোঁজে এলাকা ছেড়েছেন। কেউ আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। সরকারি সহায়তার অভাবে ওইসব পরিবারের অনেকেই নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। জানা যায়, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বর্ষার শুরুতেই পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ¯্রােতের কারণে নদী তীরবর্তী এলাকায় শুরু হয়েছে ভাঙন। ভাঙনরোধে কোনো টেকসই ব্যবস্থা না থাকায় নতুন করে আবারো প্রায় দুই-তিন কিলোমিটার এলাকা নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে তীরবর্তী জমির মালিকরা নীরব দর্শকের মতো চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন। স্থানীয় হাছনা ভানু (৪৫) বলেন, নদী ভাঙনে তিন দফায় তাদের ৮০ শতাংশ জমিসহ বাড়িভিটা বিলীন হয়ে গেছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী স্বামী আজাহার আলী ও সন্তানদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন বোনের বাড়িতে। সেখানে মারা যান স্বামী। এরপর তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে জীবনযুদ্ধে নেমে পড়েছেন। তিনি বর্তমানে কেজাইকাটা ঘাটে একটি ছোট চা-পানের দোকান দিয়ে কোনোরকমে সংসার চালাচ্ছেন। একই এলাকার অধিবাসী হযরত আলী (৫৭) বলেন, গত বছর আবাদি জমি নদীতে গেছে, এখন বাড়ি ভাঙনে পড়ছে। বাঁধের ব্যবস্থা না হলে আমরা পুরাটাই হারাবো। দেবুয়ারচর গ্রামের গৃহবধূ আছিয়া বেগম (৫২) বলেন, অনেক আগেই আমাদের ঘরবাড়ি নদীর পেটে চলে গেছে। এখন অন্যের বাড়িতে ছেলে- মেয়ে নিয়ে থাকি। কেউ কোনো সাহায্য করেনি। স্থানীয় আকবর আলী বলেন, গত দুই মাসে প্রায় ৫শ মিটার নদীর পাড়ে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। পানি এলেই এই জমিগুলো নদীতে গায়েব হয়ে যাবে। তাই দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ভাঙনরোধ করতে হবে। নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শন ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে কথা বলে কি ধরনের সরকারি সহায়তা দেওয়া যেতে পারে, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে শেরপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আখিনুজ্জামান বলেন, ২০২২ সালে নকলা উপজেলার দক্ষিণ নারায়ণখোলা এলাকায় ১৬০ মিটার ও ২০২৩ সালে ১৩০ মিটার এবং ২০২৪ সালে ৭৬ মিটার এলাকায় জিওব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধের চেষ্টা করা হয়েছে। এতে কিছুটা ফল মিললেও প্রয়োজন আরও বিস্তৃত বাঁধ। ইতোমধ্যে আরও ১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের অনুমোদন পাওয়া গেছে। আশা করি দ্রুত কাজ শুরু হবে। এছাড়া ২ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
শেরপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, ফসলি জমি
